চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর পেরোলেও এখনো সেখানে রয়েছে রাসায়নিকের গুদাম। ভ্যানে করে এভাবেই বহন করা হয় রাসায়নিক দ্রব্য। গত শনিবার
চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর পেরোলেও এখনো সেখানে রয়েছে রাসায়নিকের গুদাম। ভ্যানে করে এভাবেই বহন করা হয় রাসায়নিক দ্রব্য। গত শনিবার

বিচারে গতি কম, মাত্র একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ

এক বছর আগে বিচার শুরু হলেও ১৬৭ সাক্ষীর মাত্র ১ জনের আংশিক সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। সেই সাক্ষীও হলেন মামলার বাদী।

রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের মৃত্যুর পাঁচ বছর হলো আজ ২০ ফেব্রুয়ারি। এ ঘটনায় হওয়া মামলার বিচারে গতি নেই। সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এক বছর আগে বিচার শুরু হলেও ১৬৭ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১ জনের আংশিক সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। সেই সাক্ষীও হলেন মামলার বাদী।

বিচারের এমন গতিতে সংক্ষুব্ধ মামলার বাদী মো. আসিফ। তিনি গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ বছর হয়ে গেল, মামলার বিচার শেষ করার কোনো তোড়জোড় দেখি না। তিন মাস আগে সমন পেয়ে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলাম। আমার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছিল। জেরা হয়নি। পরে আর আমাকে আদালত থেকে ডাকা হয়নি।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, সমন ও অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না।

পাঁচ বছর হয়ে গেল, মামলার বিচার শেষ করার কোনো তোড়জোড় দেখি না। তিন মাস আগে সমন পেয়ে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলাম। আমার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছিল। জেরা হয়নি। পরে আর আমাকে আদালত থেকে ডাকা হয়নি।
মামলার বাদী মো. আসিফ

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের প্রায় চার বছর পর ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত। একই বছরের ১৫ মে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হলেও রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে ব্যর্থ হয়।

এরপর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য হয় গত বছরের ২৪ জুলাই। সেদিনও সাক্ষীকে হাজির করা হয়নি। গত ২৬ নভেম্বর মামলার বাদী আসিফ সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হন। সেদিন তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। আসামিপক্ষ থেকে তাঁকে জেরার জন্য দিন ধার্য করা হয়েছিল গত ২৯ জানুয়ারি। কিন্তু সেদিনও বাদীকে আদালতে হাজির করা হয়নি।

জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনাকারী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মাজহারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতের পক্ষ থেকে সাক্ষীদের নামে সমন ও অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কয়েকটি তারিখে কোনো সাক্ষীকে আমরা হাজির করতে পারিনি। ভবিষ্যতে সাক্ষী হাজির করার ব্যাপারে আরও সচেষ্ট থাকব।’

মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জন মারা যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় দগ্ধ আরও চারজনের। দগ্ধ হন আরও অনেকে।

অগ্নিকাণ্ডের পরদিন চকবাজার থানায় মামলা করেন আসিফ। অগ্নিকাণ্ডের সময় তাঁর বাবা জুম্মন ওয়াহেদ ভবনটির দোতলায় একটি ডেকোরেটরের দোকানে ছিলেন। তিনিও পুড়ে মারা যান।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে।

মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। আট আসামি হচ্ছেন ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক হাসান সুলতান, হোসেন সুলতান, রাসায়নিকের গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল ইকবাল, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতিক, মো. নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিফ। আটজনই এখন জামিনে আছেন।

বিচারের ধীরগতির বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু প্রথম আলোকে বলেন, এখন থেকে প্রতিটি ধার্য তারিখে সাক্ষীদের হাজির করবে রাষ্ট্রপক্ষ।

আগুনের সূত্রপাত কীভাবে

পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন চুড়িহাট্টায় কোনো ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় বিপুল পরিমাণ বডি স্প্রে, এয়ার ফ্রেশনার, গ্যাস লাইটার গুদামজাত করা ছিল। দ্বিতীয় তলায়  দাহ্য পদার্থ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলা হয়, ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় পলিব্যাগ সিল মেশিনের কাজের সময় তাপ বা অন্য কোনো কারণে বিদ্যুতের ‘স্পার্ক’ থেকে ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটে।