অর্থোপেডিক সোসাইটির গবেষণায় বলা হয়, ৪৬ থেকে ৭০ বছর বয়সে অস্টিওপোরোসিস সাধারণ সমস্যা।
দেশে পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীরা অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হন বেশি। বয়স্ক পুরুষদেরও এই রোগ হয়ে থাকে। প্রতি তিন নারীর একজন এবং প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজন এই রোগে আক্রান্ত হন। বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় বলা হয়, হাড়ক্ষয় রোগে বয়স্ক ব্যক্তিদের হাড় ভেঙে যায়। সঠিক চিকিৎসা না হলে ৫০ শতাংশের বেশি রোগী ছয় মাসের মধ্যে মারা যান। তবে যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে, ঠিকমতো খাবার খেলে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করলে অস্টিওপোরোসিস সেরে উঠে।
অস্টিওপোরোসিস রোগনির্ণয়, প্রতিরোধ এবং এ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে প্রতিবছরের ২০ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস। এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ এম আমজাদ হোসেন বলেন, অস্টিওপোরোসিস রোগে হাড়ে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায়, হাড়ের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে যায় এবং ক্রমেই হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ফলে হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। এই রোগের লক্ষণ শুরুতে বোঝা যায় না।
অর্থোপেডিক সোসাইটির গবেষণায় বলা হয়, ৫০ বছর বয়সে নারী–পুরুষ মিলিয়ে ১৫ শতাংশ এবং ৮০–ঊর্ধ্ব ৭০ শতাংশ মানুষ অস্টিওপোরোসিস রোগে আক্রান্ত হন। এতে কোমর, মেরুদণ্ড ও হাতের কবজির হাড় সবচেয়ে বেশি ভঙ্গুর হয়ে যায়। বিশ্বে প্রতি তিন সেকেন্ডে একজনের মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে নারীদের মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধের পর অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগ ও কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও হাড়ক্ষয়জনিত রোগ হতে পারে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, দেশে ৪৬ থেকে ৭০ বছর বয়সী নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে অস্টিওপোরোসিস সাধারণ সমস্যা। দেশের মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত। নিম্ন আয়ের মানুষ ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি, ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার কম পান। তাঁদের বেশির ভাগেরই হাড় যথেষ্ট শক্তিশালী হয় না। এতে অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি।
বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির সভাপতি ও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) একাডেমিক পরিচালক অধ্যাপক মোনায়েম হোসেন বলেন, মূলত এ রোগের প্রধান কারণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডির অভাব। ভিটামিন ‘ডি’ ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার না খাওয়া, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ওষুধ সেবন, নারীদের মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধের পর, ধূমপান, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার কম খাওয়া, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, রোদ এড়িয়ে চলা, অতিরিক্ত কফি ও মদ্যপান এই রোগের প্রধান কারণ।
নিটোরের আরেক চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম বলেন, এ রোগ থেকে বাঁচতে সবারই জীবনযাত্রায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিদিন ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, সুষম ও আঁশযুক্তযুক্ত খাবার খেতে হবে। নিয়মিত শরীরে রোদ লাগাতে হবে। কায়িক পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে। দুধ, ছানা, দই, ডিম, ডাল, সয়াবিন, পালংশাক, সরিষাশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, খেজুর, বাদাম, সামুদ্রিক মাছ ও মাংসজাতীয় খাবার খেলে এই রোগের ঝুঁকি কমে। পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রতিটি নারী–পুরুষকে দিনে ১ হাজার ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। ননি তোলা দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্য, সবুজ শাকসবজিসমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে। একবার শরীরের হাড় বা অস্থি ভেঙে গেলে দ্রুত অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির মহাসচিব ও নিটোরের চিকিৎসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দিবসটি উপলক্ষে নিটোরের সামনে আজ সকাল নয়টায় শোভাযাত্রা আয়োজন করা হচ্ছে। একইভাবে দেশের সব হাসপাতালে এমন শোভাযাত্রার আয়োজন থাকছে। মানুষের মধ্যে রোগ সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিতরণ করা হবে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শোভাযাত্রা শেষে নিটোরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হচ্ছে। এতে দেশের বিভাগীয় পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অনলাইনে যুক্ত থাকবেন।