বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইনটি নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে পারছে না। এই আইনের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে না। এই আইনে দুর্ঘটনার বড় কারণ সর্বোচ্চ গতিসীমা বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই। সড়ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ সড়ক, মোটরযান, সড়ক ব্যবহারকারী ও দুর্ঘটনার চিকিৎসার বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা জরুরি।
আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলনে নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোতে সপ্তম জাতিসংঘ গ্লোবাল রোড সেফটি সপ্তাহ পালিত হবে ১৫ থেকে ২১ মে। এবারের রোড সেফটি সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য টেকসই যাতায়াত। রোড সেফটি সপ্তাহ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করা মোর্চা রোড সেফটি কোয়ালিশন।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নিরাপদ সড়ক চাই-এর (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। তাতে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহের বৈজ্ঞানিক ও স্বীকৃত কোনো পদ্ধতি বাংলাদেশে নেই। ফলে দুর্ঘটনার তথ্য নিয়ে ভিন্নতা দেখা যায়। বাংলাদেশ পুলিশের দেওয়া দুর্ঘটনার তথ্যের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে পার্থক্য থাকে প্রায় পাঁচ গুণ।
প্রবন্ধে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে দেশের স্বাস্থ্য খাতে চাপ বাড়ছে এবং অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশ সফলভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুহার কমিয়েছে, কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও সড়কে প্রতিনিয়ত মানুষের মৃত্যু ঘটছে। নিরাপদ সড়কের জন্য জাতিসংঘ স্বীকৃত পাঁচটি স্তম্ভ—নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ মোটরযান, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী এবং দুর্ঘটনা–পরবর্তী চিকিৎসা। এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত একটি নতুন আইন করতে হবে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইনটি সড়ক নিরাপদ করতে পারছে না। সড়ক পরিবহন আইন থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি ফেলে দেওয়া হয়েছে। শুধু পরিবহনের বিষয়টি রয়েছে। নিরাপদ সড়কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আইনে নেই। সর্বোচ্চ গতিসীমা কত হবে, সেটাই আইনে বলা নেই। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাধর কেউ ফোন দিয়ে বললেন, আমার লোক গেছে লাইসেন্স দিয়ে দাও। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স দিয়ে দিচ্ছে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এভাবে লাইসেন্স দেওয়া অসম্ভব।’
ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির ব্যবস্থাপক খালিদ মাহমুদ বলেন, নিরাপদ সড়ক নিয়ে সরকার যেসব কার্যক্রম নেবে, সেগুলো কারা বাস্তবায়ন করবে, এসব কার্যক্রম নিয়ে সরকারি দপ্তর ও সংস্থাগুলো এবং অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় কে করবে, সেটি নির্ধারিত না। এর জন্য ন্যাশনাল রোড সেফটি অথরিটি প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এই কর্তৃপক্ষ গঠন ও সেটির বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক (রোড সেফটি) মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের (বিএনএনআরসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বজলুর রহমান, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) রোড সেফটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক কাজী বোরহান উদ্দিন প্রমুখ।