মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে সাজা বাতিল করে দুজনকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টসহ (ফোরাম-এশিয়া) ২৭ সংগঠন।
আজ সোমবার ফোরাম-এশিয়ার পক্ষ থেকে এই যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে ফোরাম-এশিয়া ও তার ২৬টি সদস্য সংগঠন সই করেছে।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) ৫৭ ধারার মামলায় গত বৃহস্পতিবার আদিলুর ও নাসিরকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাঁদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। রায়ের পর দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে আদিলুর ও নাসিরের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছিল। পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদিলুর ও নাসির ৬১ জনের মৃত্যুর বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেন, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেন।
ফোরাম-এশিয়ার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী আদিলুর ও নাসিরের প্রতি তারা দৃঢ় সংহতি প্রকাশ করছে। তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করে জেল-জরিমানার যে রায় ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল দিয়েছেন, তাতে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আদিলুর ও নাসির মানবাধিকার সংগঠন অধিকার অনুকরণীয় কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে নথিভুক্ত করেছেন। এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে রয়েছে—বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, গুম, নারী ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা।
বিবৃতিতে বলা হয়, আদিলুর ও নাসির বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষায় প্রাণপণ কাজ করেছেন। এক দশকের অযৌক্তিক হয়রানির পর তাঁদের সাজার বিষয়টি দেশে, দেশের বাইরের সব মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি শীতল বার্তা দিয়েছে। সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে আদিলুর ও নাসিরকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় ফোরাম-এশিয়া।
উল্লেখ্য, ফোরাম–এশিয়া হলো মূলত এশিয়ার ২৩ দেশের ৮৫টি মানবাধিকার সংগঠনের নেটওয়ার্ক। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত ফোরাম–এশিয়া গবেষণা, দক্ষতা বৃদ্ধিসহ নানাভাবে টেকসই উন্নয়ন ও মানবাধিকার আন্দোলন এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিদাতা সংগঠনগুলো
কম্বোডিয়ান হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (এডিএইচওসি); আওয়াজ ফাউন্ডেশন পাকিস্তান: সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস (এডব্লিউএজেডসিডিএস); ব্যালে অলটারনেটিভ লিগ্যাল অ্যাডভোকেটস ফর ডেভেলপমেন্ট ইন মিন্দানাও (বিএএলএওডি মিন্দানাও), দ্য ফিলিপিনস; বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (এমএএসউএম), ইন্ডিয়া; বির দুইনো, কিরগিজস্তান; বাইটস ফর অল, পাকিস্তান; সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিএইচআরডি), মঙ্গোলিয়া; সিভিল সোসাইটি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক (সিএসএইচআরএন), আফগানিস্তান; ডিফেন্স অব হিউম্যান রাইটস (ডিএইচআর), পাকিস্তান; এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম-এশিয়া); হিউম্যান রাইটস মেজারমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এইচআরএমআই), নিউজিল্যান্ড; ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল ইনিশিয়েটিভ পাবলিক ফাউন্ডেশন (আইএলআই ফাউন্ডেশন), কাজাখস্তান; ইনফরমাল সেক্টর সার্ভিস সেন্টার (আইএনএসইসি), নেপাল; কারাপাতান অ্যালায়েন্স ফিলিপিনস (কারাপাতান); কাজাখস্তান ইন্টারন্যাশনাল ব্যুরো ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড রুল অব ল (কেআইবিএইচআর); কম্বোডিয়ান লিগ ফর দ্য প্রমোশন অ্যান্ড ডিফেন্স অব হিউম্যান রাইটস (এলআইসিএডিএইচও); মালদ্বিপিয়ান ডেমোক্রেসি নেটওয়ার্ক; ন্যাশনাল সেন্টার অ্যাগেইনস্ট ভায়োলেন্স (এনসিএভি), মঙ্গোলিয়া; ফিলিপিন অ্যালায়েন্স অব হিউম্যান রাইটস অ্যাডভোকেটস (পিএএইচআরএ); পিপলস ওয়াচ, ইন্ডিয়া; ফিলরাইটস; পিপলস সলিডারিটি ফর পার্টিসিপেটরি ডেমোক্রেসি (পিএসপিডি), সাউথ কোরিয়া; পাবলিক অ্যাসোসিয়েশন ‘ডিগনিটি’, কাজাখস্তান; পুসাট কোমাস, মালয়েশিয়া; টাস্ক ফোর্স ডিটেইনিস অব দ্য ফিলিপিনস (টিএফডিপি), থিংক সেন্টার, সিঙ্গাপুর; ওমেনস রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার (ডব্লিউওআরইসি), নেপাল।