ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের কর্মসূচি ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির। গত সোমবার এ কর্মসূচি ঘোষণার পরই ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ। ঘোষণা অনুযায়ী, কাজ (পিটিয়ে রক্তাক্ত করা) করেছে ছাত্রলীগ।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নীলক্ষেতের ‘মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ’ হয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতে গেলে ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়েন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। বেপরোয়া পিটিয়ে তাঁদের রক্তাক্ত করেছে ছাত্রলীগ। পেটানোর পর ধাওয়া দিয়ে ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসছাড়া করেছে ছাত্রলীগ।
এদিকে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলায় জড়িত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের শাস্তি দাবি করেছে ৪টি ছাত্রসংগঠন। হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন তারা। ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতে তাদের কেউ দ্রুত ডাকসু নির্বাচন দাবি করেছে, কেউ আবার পরিবেশ পরিষদের বৈঠক ডাকার দাবি তুলেছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। হামলার ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ারকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেলেও ছাত্রলীগ হামলার ঘটনাকে ‘ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সরব হওয়া ৪ ছাত্রসংগঠন হলো ছাত্র ইউনিয়ন (শিমুল-আদনান), ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্র ফেডারেশন (গণসংহতি আন্দোলন) ও ছাত্রলীগ-বিসিএল। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক বিবৃতিতে এসব সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা ছাত্রদলের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শিমুল কুম্ভকার ও সাধারণ সম্পাদক আদনান আজিজ চৌধুরী যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, (ছাত্রদলের ওপর হামলার) ঘটনা ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে চলমান ছাত্রলীগের দখলদারি ও সন্ত্রাসবাদী রাজনীতির আরও একটি দৃষ্টান্ত। অপরিসীম ক্ষমতার নিকৃষ্ট অপব্যবহার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দালালি ও চাটুকারিতা ক্যাম্পাসের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত করা সন্ত্রাসমুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নির্মাণের অন্যতম পূর্বশর্ত। ছাত্র ইউনিয়ন হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং পরিবেশ পরিষদের বৈঠক আহ্বানের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করার দাবি জানাচ্ছে।
যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রদলের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানান ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আকরাম হুসাইন। তাঁরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি মতপ্রকাশের ও স্বাধীন চিন্তার পরিসর তৈরি করা। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনের ফলে ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সহাবস্থান গড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় সেই পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে গেছে। অবিলম্বে ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করে ডাকসু নির্বাচন দিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই। ছাত্রদলের ওপর হামলায় জড়িত দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক ও সদস্যসচিব উমামা ফাতেমা গতকাল যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। অবিলম্বে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তাঁরা বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে ছাত্রলীগ।
হলে গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, জোর-জবরদস্তি করে শিক্ষার্থীদের মিছিলে আসতে বাধ্য করছে তারা। এমনকি বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলা-নির্যাতন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে কার্যকর অবস্থান না নিয়ে বরং একে জায়েজ করার চেষ্টা করছে। এ নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ভয়মুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসের দাবিতে ছাত্রসমাজকে আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।
ছাত্রলীগ-বিসিএলের কেন্দ্রীয় সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ভিন্নমত দমনে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের পেশিশক্তির ব্যবহার অগণতান্ত্রিক ও শিক্ষা সন্ত্রাস হিসেবে বিবেচিত। বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের হামলার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এড়াতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণই কিছুদিন পর পর এমন ঘটনার প্রেরণা জোগায় বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা ছাত্রদলের ওপর হামলায় জড়িত সন্ত্রাসী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।