চট্টগ্রাম নগরে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ‘কিশোর গ্যাং’–এর নেতা হেলাল বাদশা চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান জিনিয়া শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নেয়ামত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র মামলায় হেলাল বাদশা চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল। শুনানি শেষে আদালত বাদশার এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে ১৭ মে রাতে সাত সহযোগীসহ হেলালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিন রাতে তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরের খুলশী জিইসি বাটা গলি এলাকার একটি খালি জায়গার পাশ থেকে দুটি গুলিসহ একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র (এলজি) উদ্ধার করা হয়।
নগরের ব্যস্ততম সিঅ্যান্ডবি এলাকায় সড়কের পাশে নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের মাঠে ১৭ মে বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যায় ১৫ বছরের এক কিশোর। তিন বন্ধু তাদের মুঠোফোনগুলো তার কাছে জমা রেখে মাঠে খেলতে যায়। কিশোর ফোনসেটগুলো নিয়ে মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। এ সময় হঠাৎ হেলাল বাদশার নেতৃত্বে ১৫-২০ তরুণ এসে ওই কিশোরকে মারতে শুরু করে। মারতে মারতে পাশের বাটা গলির ভেতরে একটি খালি জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর তার বড় ভাইয়ের কাছে ফোন করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চান হেলাল বাদশা ও তার সহযোগীরা। অপহৃত কিশোরের কথা ভিডিও করেও পাঠানো হয় পরিবারের কাছে।
সন্ধ্যার পর তাকে বাটা গলির খালি জায়গা থেকে আকবর শাহ থানার ইস্পাহানি গেট পেট্রলপাম্পের পেছনে একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও মারধর করা হয়। ছেলেটির দুই হাত, পা, পিঠ ও মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ভুক্তভোগী কিশোরের বড় ভাই রাকিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার পর তিনি ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে জানান। পুলিশ তৎপর হয়ে রাতেই সাত সহযোগী ও অস্ত্রসহ বাদশাকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে নগরের পাঁচলাইশ থানার মারামারির একটি মামলায় ১০ মে গ্রেপ্তার হয়ে ওই দিনই আদালত থেকে জামিন পান বাদশা। তাঁর বিরুদ্ধে নগরের খুলশী ও পাঁচলাইশ থানায় অপহরণ, মারামারি, হত্যাচেষ্টা ও অস্ত্র আইনে পাঁচটি মামলা রয়েছে।
পুলিশ জানায়, হেলাল বাদশার লেখাপড়া চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। নিজেকে কখনো ছাত্রলীগ, কখনো যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য, নগর ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আরশেদুল আলমের (বাচ্চু) অনুসারী হিসেবেও পরিচিত। তবে আরশেদুল আলমের দাবি, হেলাল বাদশাকে তিনি চেনেন না। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে প্রশ্রয় দিই না। যারা এসব অপরাধ করে, তাদের বিচার হোক।’
পুলিশের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরে অন্তত ২০০ কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। একেক দলে রয়েছে ৫ থেকে ১৫ জন। এই হিসাবে চট্টগ্রাম নগরে এসব গ্যাংয়ের সদস্যসংখ্যা অন্তত ১ হাজার ৪০০।
পুলিশ জানায়, কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকতা বা প্রশ্রয় দিচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ৬৪ জন ‘বড় ভাই’। গত ছয় বছরে ৫৪৮টি অপরাধের ঘটনায় কিশোর গ্যাং জড়িত। এর মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি।
চলতি বছরের শুরুতে নগর পুলিশের করা এক জরিপে উঠে আসে, নগরে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবম-দশম শ্রেণির ছাত্রদের অনেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অভিভাবকদের অগোচরে কিশোর গ্যাংয়ের ‘বড় ভাই’দের প্ররোচনায় অপরাধে জড়াচ্ছে। শুরুতে তারা বীরত্ব দেখানোর জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। পরে তা থেকে আর বের হতে পারে না।