বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ খালেকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলায় ১১৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। অনুসন্ধান শেষে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এ মামলা করা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তরফদার জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সিএফও জাহিদুল হক, এম এ খালেকের স্ত্রী সাবিহা খালেক, ছেলে শাহরিয়ার খালেদ, মেয়ে শারওয়াত খালেদ, জামাতা তানভিরুল হক ও শ্বশুর ফজলুল হক এবং আবুল কাশেম মোল্লা, রাশেদ মোহাম্মদ মাজহারুল, খশরুবা সুলতানা, শেখ ইউসুফ আলী, মাহবুবা সুলতানা, দিলরুবা সুলতানা, নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান মোস্তফা ও কাজী শাহরিয়ার।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০০৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এম এ খালেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে থেকে নিজে ও আত্মীয়স্বজনসহ সহযোগীরা মিলে প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই টাকা আত্মসাৎ করে সম্পদে রূপান্তর এবং বিদেশে পাচার করেছেন।
মামলার বাদী সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম স্কোয়াডের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সিআইডি মামলাটির তদন্ত করবে। আসামিদের মধ্যে এম এ খালেক ও নজরুল ইসলামকে এর আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিআইডি সূত্র জানায়, ফারইষ্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেড জয়েন্ট স্টক অ্যান্ড ফার্মের অধীনে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হোদা ভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির বিশেষ রিপোর্টে দেখা যায়, ঘটনার সময়কালে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিনিয়োগকারী ৮৯ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৭ টাকার চেক বা নগদ টাকা জমা দেন। বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজার লেনদেন পরিচালনার জন্য বিও হিসাবে ওই টাকা দেখানো হলেও কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে তা জমা হয়নি। অর্থাৎ ভুয়া জমা দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ছাড়া আসামিদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন সময়ে মোট ১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকার চেক জমা করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে (অপর্যাপ্ত জের, স্বাক্ষরে গরমিল, টাকার অঙ্ক ভুল লেখা ইত্যাদি) চেকগুলো প্রত্যাখ্যাত হয়, যা রিভারসাল এন্ট্রি (জমা) দেখানো হয়েছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে কোম্পানির হিসাবের যোগফলে ২২ কোটি ৮৬ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ টাকার স্থলে ৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ টাকা বসিয়ে তথ্যের গরমিল করে ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এম এ খালেক তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিও হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা না থাকা সত্ত্বেও দুটি চেক ইস্যু করে ৫০ লাখ টাকা লেয়ারিং করে আবুল কাসেম মোল্লা নামে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের হিসাবে জমা করেন। মূলত প্রাইম ব্যাংকের ব্যক্তিগত হিসাবে টাকা হস্তান্তর করে আত্মসাৎ করেন তিনি। আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক থেকে ফারইস্ট স্টকসের নামে নেওয়া ৪১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের (আবুল কাশেম মোল্লা, কাজী শাহরিয়ার এবং নজরুল ইসলাম) মাধ্যমে লেয়ারিং করে হস্তান্তর ও গ্রহণ করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রতারণার অর্থকে সম্পদে রূপান্তরের জন্য স্থাবর সম্পত্তির বিক্রেতা শ্যামা করিমকে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের ব্যাংক হিসাব থেকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমির দাম পরিশোধ করা হয়েছে।
মতিঝিল থানার ওসি মিজানুর রহমান আজ বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিআইডির পক্ষ থেকে এখানে মামলাটি করা হয়েছে। তবে তদন্ত থেকে শুরু করে সবকিছু সিআইডি করবে।’