১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গেছেন ১১ লাখ ৭০ হাজার নারী কর্মী। বেশির ভাগ নারী যান গৃহকর্মী হিসেবে। সেখানে গিয়ে অতিরিক্ত কাজের চাপ, শারীরিক–মানসিক নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে কেউ কেউ ফিরে আসেন। তবু প্রতিবছর কর্মীরা যাচ্ছেন। অর্থনৈতিক অসহায়ত্ব থেকে ভাগ্য ফেরানোর আশায় বাধ্য হয়েই বিদেশে যান ৭৩ শতাংশ নারী কর্মী।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করে। সেখানেই এসব তথ্য জানানো হয়। নারী অভিবাসী কর্মীর অধিকার ও সেবা নিশ্চিত করতে এ সভায় আয়োজন করা হয়েছে।
নিবন্ধে বলা হয়, গৃহকর্মী, কেয়ারগিভার, স্বাস্থ্যসেবিকা, তৈরি পোশাক খাত ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতে বিদেশে যান নারীরা। তাঁদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ গেছেন সৌদি আরবে। এ দেশটিতে নারীরা মূলত গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যান।
এ ছাড়া যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ নারী গৃহকর্মীর কাজ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। যেসব নারী কর্মী দেশে ফিরে আসেন, তাঁদের ৩৭ শতাংশের বেশি নারী বেতন বকেয়া রেখেই ফিরে আসেন। আর ৪৭ শতাংশের কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকে না।
নিবন্ধে বলা হয়, নারী অভিবাসীর অধিকার সংরক্ষণে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন-২০১৩ (সংশোধিত ২০২৩) মূল্যায়ন করে দেখা গেছে, নারী কর্মীদের যৌন নির্যাতনসংক্রান্ত কোনো বিষয় তাতে আলাদা করে রাখা হয়নি।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফর বলেন, দেশেও গৃহকর্মীরা নির্যাতিত হন। বিদেশে তো যোগাযোগের অদক্ষতাও থাকে। তাই প্রশিক্ষণে জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদেশে পাঠানোর একটা প্রবণতা আছে রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে। এ ছাড়া দক্ষ নারী কর্মী তৈরি করতে হবে। সৌদি আরব নিলেও আর কোনো দেশ গৃহকর্মী খাতে দক্ষ কর্মী ছাড়া নিতে চায় না।
সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন ও হেলভেটাসের সহায়তায় পরিচালিত স্ট্রেনদেনড অ্যান্ড ইনফরমেটিভ মাইগ্রেশন সিস্টেমস নামের প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সাল থেকে অভিবাসীদের অভিযোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬৯৭টি অভিযোগ এসেছে বলে জানানো হয়েছে নিবন্ধে। এর মধ্যে ৯০টি অভিযোগ করেছেন নারী কর্মীরা, যার ১২টি অভিযোগ যৌনসহ শারীরিক নির্যাতনের। ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সহিংসতাসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশে মারা গেছেন ৭০৫ জন নারী কর্মী। এই প্রেক্ষাপটে মহিলা আইনজীবী সমিতি ব্যাপক সচেতনতা বাড়ানো ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে নিবন্ধে।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, দেশে নারীরা নানা খাতে কাজ করেন। নির্মাণ অবকাঠামো খাতেও কাজ করেন তাঁরা। অথচ বিদেশে দাসত্ব এবং অমানবিক জায়গায় কাজ করতে যাচ্ছেন নারী কর্মীরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী। তিনি বলেন, একজন নারী কর্মীও বিদেশে গিয়ে প্রতারিত বা নির্যাতিত হতে পারেন না। এটি প্রতিরোধে গন্তব্য দেশে কেন জোর দেওয়া যাচ্ছে না, কেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমঝোতা করতে পারছে না—এসব প্রশ্ন রাখেন। তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে আলোচনা করা দরকার। আবার দেশে ফিরে আসার পরও তাঁদের সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
অন্য বক্তারা বলেন, যেসব দেশে নারী কর্মীরা যাচ্ছেন, সেসব দেশের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। সেখানকার আইনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য ওই সব দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করা দরকার।
অনুষ্ঠানে নিবন্ধ উপস্থাপন করেন মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রকল্প পরিচালক রাফাতুর রহমান।