তবুও সময় হলো শেষ...

আকবর আলি খান
প্রথম আলো ফাইল ছবি

লেখক ও গবেষক আকবর আলি খানকে আমরা জানি সেই ষাটের দশক থেকে। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পড়াশোনার চেয়েও সে সময় বেশি ব্যস্ত ছিলাম ছাত্ররাজনীতি বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে। আমাদের চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ যাঁরা ছিলেন, বিশেষ করে যাঁরা ছাত্র ইউনিয়নের সহকর্মী বা নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র হিসেবে পরিচিত অথবা বিভিন্ন বিষয়ে ফার্স্ট ক্লাস পেতেন, এমনকি সে সময় যাঁরা সিএসপি (সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান) পরীক্ষায় বিশেষ ভালো করতেন, তাঁদের সম্পর্কে আমার জানার বেশ আগ্রহ ছিল। তাঁদের অনেকের নামই আমি মনে রাখতাম, তাঁদের জীবন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতাম।

এভাবেই আকবর আলি খানের নাম আমি জানতে পারি। আকবর ভাই ইতিহাস বিভাগের সেরা ছাত্র হয়েছিলেন। থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলে। পরে খুব ভালো ফল করে ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন।

স্বাধীনতাসংগ্রামের সময় তিনি ছিলেন হবিগঞ্জের এসডিও; পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কাজ করেছেন মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে। এবং এটাই তাঁর জীবনের বড় গৌরব ছিল।

তাঁর কথা শোনার জন্য তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছিল দেশের মানুষের মধ্যে। এসবের একটি বড় কারণ ছিল, তিনি সব সময় সত্য বলেছেন, সত্য উচ্চারণ করেছেন—সেটা কারও পছন্দ হোক বা না হোক, কারও পক্ষে বা বিপক্ষে যাক। এগুলো কিন্তু তিনি বলেছেন অকাট্য যুক্তি ও তথ্য দিয়ে। এ জন্যই তাঁর বক্তব্য এতটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

আকবর ভাইয়ের সঙ্গে আমার যখন প্রথম পরিচয় হয়, তিনি তখন এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) চেয়ারম্যান ছিলেন। কী একটা কাজ নিয়ে গিয়েছিলাম, ঠিক মনে নেই। তবে এটা মনে আছে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোয় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। আকবর ভাই জানতেন যে আমি বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এমনভাবে কেন ব্যবস্থাটি ভেঙে পড়ল, এ নিয়ে তিনি একই সঙ্গে হতাশা ও দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর প্রশ্ন ছিল, কেন এমন হলো? এ বিষয়ে দীর্ঘ আলাপ হয়েছিল সেদিন।

আকবর আলি খানের মরদেহ তাঁর বাসায় নেওয়ার পর শোকাহত স্বজন

চলতি বছর প্রথম আলোর ঈদসংখ্যার জন্য আকবর ভাইয়ের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সেখানেও দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন, তিনি বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকেও কেন আর সরাসরি যুক্ত থাকতে পারলেন না—এ নিয়ে। সব সময় যে তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় ন্যায় ও সমতা আশা করেছেন, সেসব নিয়েও কথা বলেছেন। সমাজতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন আমৃত্যু। ভবিষ্যতেও এমনই একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক সমাজব্যবস্থা তাঁর আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ছিল, যেটা অনেকটা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মতো হবে। তবে এখানে একটি পার্থক্য হলো, বাংলাদেশের লোকসংখ্যা অনেক বেশি। আকবর ভাই ভাবতেন, এই পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে উত্তর আমেরিকার দেশগুলো থেকেই। কারণ, এই দেশগুলোয় বেকারত্ব ও আয়-ব্যয়ের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে।

দুই

মানুষের জীবনে জন্ম-মৃত্যু স্বাভাবিক বিষয়। তবু লেখক-গবেষক ড. আকবর আলি খানের এই আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। হয়তো বয়স হয়েছিল, অসুস্থতা ছিল, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছিল। তারপরও তিনি যে অসম্ভব প্রাণশক্তি নিয়ে সব শারীরিক বাধাকে অতিক্রম করে চলেছেন, সেটা ছিল এক অসম্ভব ব্যাপার।

সবশেষে এসে বড় দুঃখ নিয়ে এ কথা বলতে হয় যে আকবর আলি খানের মতো একজন মানুষের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্তদের কারও কোনো শোকবাণী বা বিবৃতি দেখতে পেলাম না।

আকবর আলি খান ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন, পিএইচডি করেছেন অর্থনীতিতে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের রসুল্লাবাদ গ্রামের এক সাধারণ পরিবার থেকে এসে পড়াশোনা, অধ্যবসায়, একনিষ্ঠতা ও সততার বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আকবর ভাই। একই সঙ্গে দেশের সব উত্থান-পতনের ঘটনাবলির প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সত্য বলার যে সাহস তিনি দেখিয়েছেন, সেটিও আমাদের সামনে বিরল।

আকবর আলি খানের মৃত্যুতে তাঁর বাড়িতে গিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান

সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন আকবর ভাই। সর্বশেষ গত সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়েছেন, পরীক্ষা নিয়েছেন। অর্ধেক দেখেও রেখেছেন পরীক্ষার খাতাগুলো। ক্লাসে যেতে এক মিনিটের জন্যও বিলম্ব করেননি কোনো দিন। পাশাপাশি গবেষণা ও লেখালেখির কাজও অব্যাহত রেখেছিলেন আকবর ভাই। বইয়ের এক বিশাল সংগ্রহ ছিল তাঁর। সেখান থেকে পাঁচ হাজার বই তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিকে দান করেছেন। তাঁর আশা, ভবিষ্যতের গবেষকেরা এ সংগ্রহশালা থেকে উপকৃত হবেন।

আকবর ভাই আসলে শিক্ষকতা করতে চেয়েছেন। একবার সরকারি চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন। পড়িয়েছেন অনেক দিন। তাঁর মৃত্যুও হলো শিক্ষক হিসেবেই।

তিন

আকবর আলি খান আরও বেশ কিছুদিন বেঁচে থাকবেন—এটা আমরা সবাই আশা করেছিলাম। এবং তিনি তিনটি বিষয়ে বই লেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন—বাংলাদেশের পানিসম্পদ, বাংলাদেশের ইতিহাস এবং তাঁর আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড। কিছু প্রস্তুতিও তিনি নিয়েছিলেন। আকবর ভাইয়ের গাড়িচালক স্বরূপ দের কাছ থেকে শুনলাম, ইতিমধ্যে পানিসম্পদ-বিষয়ক অনেক কাগজপত্র ও বই একত্র করে তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আকবর ভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যুতে অসম্পূর্ণ রয়ে গেল সবকিছু। এই বইগুলো আমাদের জন্য, আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতো। তাঁর জীবন ও চিন্তাজগতের পূর্ণতা দেখতে পেতাম আমরা।

এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্ব ও আনন্দের বিষয় যে বিগত ১০ বছরে প্রকাশিত আকবর ভাইয়ের আটটি গ্রন্থই প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। বইগুলোর বিষয়বৈচিত্র্যে রয়েছে অর্থনীতি, রাজনীতি, দারিদ্র্য, বাজেট; এমনকি নতুন আলোকে তিনি দেখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। জীবনানন্দের বনলতা সেন বা অন্যান্য কবিতার ভেতরেও প্রবেশের চাবিকাঠি খুঁজেছেন আকবর ভাই। উল্লেখ্য, তিনি আমাদের বহুবার বলেছেন, কোনো বিষয়ে ১০-১৫ বছরের গবেষণা করা ছাড়া কোনো বই লেখেননি। তাঁর প্রতিটি বইয়ের ক্ষেত্রেই এটি সত্য।

প্রথমা প্রকাশন আর প্রথম আলোর প্রতি আকবর ভাইয়ের একটা আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল। সর্বশেষ আমরা প্রথমা থেকে প্রকাশ করেছিলাম তাঁর আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড পুরানো সেই দিনের কথা। বইটি হাতে পেয়ে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। এই বইয়ে আকবর ভাই তাঁর পরিবারের দুই শ বছরের ইতিহাস নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, তাঁর মেয়ে নেহরীন খানের ইচ্ছে ছিল, তিনি যেন তাঁর পারিবারিক ইতিহাস অনুসন্ধান করেন।

ড. আকবর আলি খানের মতো মানুষগুলো কোনো সরকারের আমলেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্বীকৃত হন না। একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক যেন তাঁদের জন্য নয়। তবে আকবর আলি খানদের মতো মানুষের স্থান রয়েছে সাধারণ মানুষের মনের গভীরে, সেখানে আছে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়, আমাদের একজন সহকর্মী মো. শহিদুল ইসলাম নিয়মিত যেতেন আকবর ভাইয়ের কাছে। আকবর ভাই বলতেন, সেটা রেকর্ড করা হতো। সেই কথার শ্রুতলিপি করে তাঁর কাছে নিয়ে যেতেন শহিদ। আকবর ভাই আবার সেটা দেখে দিতেন। এভাবে তাঁর একেকটি বই লেখার কাজ এগিয়েছে। অত্যন্ত কঠিন একটি প্রক্রিয়া। এর মধ্য দিয়ে তিনি কাজগুলো করেছেন। এই শারীরিক অবস্থায় যেভাবে তিনি লেখালেখির কাজ এগিয়ে নিয়েছেন, যে বিশাল পরিমাণ কাজ তাঁর, তাতে আমার খ্যাতিমান রুশ লেখক নিকোলাই অস্ত্রোভস্কির কথা মনে পড়ে। শারীরিক এত অসুবিধা কাটিয়েও এটা সম্ভব হয়েছিল কেবল আকবর ভাইয়ের দৃঢ় মনোবল ও প্রবল ইচ্ছাশক্তির জন্য।

যখনই আমরা আকবর ভাইকে কোনো লেখা লিখতে বা কিছু বলতে অনুরোধ করেছি, তিনি কথা রেখেছেন। এমনকি বিগত এক বছরে একাধিক অনুষ্ঠানে আমরা তাঁকে আসতে বলেছি—তিনি এসেছেন, কথা বলেছেন, আমাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। সেই একই উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উদ্যম তাঁর মধ্যে দেখতে পেয়েছি আমরা। ২ সেপ্টেম্বর প্রথমা থেকে প্রকাশিত 1971: The Siliguri Conference বইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠানে আমরা আকবর ভাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। অন্য একটি কাজ থাকায় তিনি আসতে পারেননি। সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। গত বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সহকর্মী হুমায়ুন কবিরকে ফোন করে বইটি চাইলে আমরা পাঠিয়ে দিই। তিনি বলেছিলেন, ‘এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা বই আমি দ্রুতই পড়তে চাই।’

চার

আকবর আলি খানের আগ্রহ, অধ্যবসায়, বিচিত্র বিষয়ে তাঁর লেখালেখি, বক্তৃতাসহ নানা কাজে যুক্ততার দিকে যদি আমরা লক্ষ করি, একটা বিপুল বিস্ময় জাগে। বিগত দুই দশকে দেশের মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি তৈরি হয়েছিল তাঁর। খুব ইতিবাচক একটা ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল। তাঁর কথা শোনার জন্য তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছিল দেশের মানুষের মধ্যে। এসবের একটি বড় কারণ ছিল, তিনি সব সময় সত্য বলেছেন, সত্য উচ্চারণ করেছেন—সেটা কারও পছন্দ হোক বা না হোক, কারও পক্ষে বা বিপক্ষে যাক। এগুলো কিন্তু তিনি বলেছেন অকাট্য যুক্তি ও তথ্য দিয়ে। এ জন্যই তাঁর বক্তব্য এতটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

২০১৬ সালে আকবর ভাইয়ের স্ত্রী হামীম খান ও একমাত্র মেয়ে নেহরীন খান মারা যান। তাঁদের মৃত্যু তাঁকে গভীরভাবে শোকাহত করেছিল। আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড পুরানো সেই দিনের কথায় তিনি তাঁদের স্মৃতিচারণা করেছেন। এতটা শোকাহত জীবনে শেষ পর্যন্ত আকবর ভাইয়ের সঙ্গে থেকেছেন তাঁর শতবর্ষী শাশুড়ি জাহানারা রহমান। জাহানারা রহমান কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন। পঞ্চাশের দশকে ঢাকার বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন তিনি।

শাশুড়িকে প্রবলভাবে শ্রদ্ধা করতেন আকবর ভাই। তিনিও আকবর ভাইয়ের সব দুঃখ-কষ্ট অতিক্রম করতে সহায়তা করেছেন এবং অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। জাহানারা রহমান আর আকবর আলি খান—শেষ পর্যন্ত এই দুজন মিলে ছিল তাঁদের পরিবার। এভাবে তাঁর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখলে আমরা একটি মহৎ জীবনের সন্ধান পাই।

পাঁচ

আসলে এ সময়ে আকবর আলি খানের মতো একজন লেখক-গবেষকের চলে যাওয়ায় আমাদের জন্য খুবই অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কোভিডকালে ও কোভিড-পরবর্তীকালে আমাদের দেশের বিশিষ্ট চিন্তাবিদদের চলে যাওয়ার মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে। একটা গভীর শূন্যতা তৈরি হচ্ছে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে। এই শূন্যতা কবে পূরণ হবে, জানি না। এমনিতেই এই সমাজ ও রাষ্ট্রে যত ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে, তার সমাধান কোন পথে, আমাদের তা জানা নেই। এ ক্ষেত্রে ড. আকবর আলি খানের মতো মানুষ আমাদের পথের সন্ধান দিতে পারতেন। সেটা থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম—এই দুঃখবোধটাই এখন সবচেয়ে বড় করে বাজে।

সবশেষে এসে বড় দুঃখ নিয়ে এ কথা বলতে হয় যে আকবর আলি খানের মতো একজন মানুষের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্তদের কারও কোনো শোকবাণী বা বিবৃতি দেখতে পেলাম না। দেশের কতজনের মৃত্যুতে তো কত শোকবাণী দেখি। আমরা জানি, ড. আকবর আলি খান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন সরকারি কর্মকর্তা, যিনি প্রশাসনের প্রধান পদগুলোয় সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি বিএনপির প্রভাবাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে জোরালো প্রতিবাদী ভূমিকা রেখেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত পদত্যাগও করেছিলেন। দেশে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আকবর আলি খানের ভূমিকা ভবিষ্যতেও দেশবাসী সব সময় স্মরণ করবে। একই সঙ্গে একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে তাঁর সব ভূমিকা দেশের মানুষের কল্যাণের লক্ষ্য সামনে রেখেই করেছেন। সে জন্য দেশবাসী তাঁর স্বাধীন মত গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনত।

তবে এখন তো সবই দলীয় রাজনীতিকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। সে জন্য দল, প্রশাসন বা সমর্থক লেখক ও শিল্পী বা তাঁদের সংগঠনগুলোও ড. আকবর আলি খানের মতো ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করে থাকেন একইভাবে।

শেষ কথা হলো, এ রকম এক পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে ড. আকবর আলি খানের মতো মানুষগুলো কোনো সরকারের আমলেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্বীকৃত হন না। একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক যেন তাঁদের জন্য নয়। তবে আকবর আলি খানদের মতো মানুষের স্থান রয়েছে সাধারণ মানুষের মনের গভীরে, সেখানে আছে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।