ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজাধসে হতাহতের ঘটনায় করা মামলায় ভবনমালিক সোহেল রানাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। অন্য কোনো মামলা না থাকলে সোহেলের কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী।
বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার জামিন প্রশ্নে রুলসহ আদেশ দেন। কেন তাঁকে (সোহেল রানা) নিয়মিত জামিন দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
পুলিশের করা ওই মামলা নিম্ন আদালতে বিফল হয়ে গত মাসে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন সোহেল রানা, যার ওপর আজ শুনানি হয়। আদালতে সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. সাজ্জাদ আলী চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ মাসুদ রানা।
আইনজীবী মো. সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জানামতে সোহেল রানার বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। হতাহতের ঘটনায় করা মামলায় জামিনের মধ্য দিয়ে পাঁচটি মামলায় জামিন পেলেন তিনি। অপর দুটি মামলায় সোহেল রানার সাজা হয়। ইতিমধ্যে সাজাভোগ শেষ হয়েছে। অন্য কোনো মামলা না থাকলে সোহেল রানার কারামুক্তিতে আইনি কোনো বাধা নেই।
অবশ্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, ওই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। হাইকোর্টের জামিনের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজাধসে ১ হাজার ১৩৫ শ্রমিক নিহত হন। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ১ হাজার ১৬৯ জন। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় একই বছরের ২৯ এপ্রিল বেনাপোল থেকে ভবনমালিক সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলা করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়েও মামলা করে।
হতাহতের ঘটনায় পুলিশের করা ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে সোহেল রানা জামিন পেয়েছিলেন। জামিন প্রশ্নে রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল রুল অ্যাবসলিউট (জামিন মঞ্জুর) করে রায় দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। সোহেল রানা জামিন স্থগিত হয়। আপিল বিভাগ শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন। একই সঙ্গে মামলাটির বিচার ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেন।
আইনজীবী মো. সাজ্জাদ আলী চৌধুরী জানান, ছয় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও মামলাটির বিচার শেষ হয়নি। এ সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না করতে পারলে আপিল বিভাগের আদেশে সোহেল রানার জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়। এখন পর্যন্ত যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাঁদের কেউই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সোহেল রানার নাম বলেননি। মূলত এসব যুক্তিতে জামিন চাওয়া হয়।