গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাঁটাখালীসংলগ্ন খুলসীতে করতোয়া নদীর উৎসমুখে জলকপাট নির্মাণের ফলে কী ধরনের পরিবেশগত প্রভাব পড়েছে, তা পর্যবেক্ষণ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি ওই এলাকায় যান।
এ সময় স্থানীয় লোকজন বলেন, দুই নদীর সংযোগস্থলে নির্মিত জলকপাট বগুড়ার করতোয়া নদীকে ‘হত্যা’ করেছে। জলকপাট অপসারণ করে নদী খনন করে ভাটির এই করতোয়াকে বাঁচানোর দাবি জানান তাঁরা।
প্রসঙ্গত, করতোয়া নামের আরেকটি নদী রয়েছে। উজানের সেই করতোয়া নীলফামারীর ডোমার থেকে এসে গোবিন্দগঞ্জ হয়ে বাঙালি নদীতে মিশেছে।
চাঁনপুর খুলসির কৃষক শামসুদ্দিন বলেন, ‘ভরা গাঙ আচলো। আটাশির বানের পর নদীর মুখোত সরকার এডা গেট বানাইয়া করতোয়া নদীডাক হত্যা করিচে।’
বেলার প্রধান নির্বাহী উজানের করতোয়ায় কিছুক্ষণ নৌকায় চড়ে মাঝি, জেলেসহ স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, জলকপাট অপসারণ ও নদী খনন ছাড়াও দখল-দূষণ বন্ধ করে করতোয়ায় আবার প্রাণ ফেরানো সম্ভব। এ সময় এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, রিভারাইন পিপলের পরিচালক তুহিন ওয়াদুদ, বাপার বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে, বন্যা থেকে রক্ষার নামে ১৯৮৮ সালের বন্যার পর জলকপাটটি নির্মাণ করে পাউবো।
করতোয়ার দখলদার উচ্ছেদ ও পানির প্রবাহ নির্বিঘ্ন রাখতে ২০১৫ সালের ২২ জুন বেলা হাইকোর্টে একটি রিট করে। হাইকোর্ট অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদসহ উৎসমুখে নির্মিত জলকপাটের কারণে পরিবেশগত প্রভাব নির্ণয় করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। জানতে চাইলে পাউবো গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশগত অবস্থা নিরূপণে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে এখনো স্টাডি চলছে।
রিজওয়ানা হাসান গোবিন্দগঞ্জ থেকে নদীর দখল–দূষণের চিত্র দেখতে ভাটির দিকে যান। তিনি বগুড়ার বিসিএল পেপার মিলের তরল বর্জ্য নদীতে ফেলার চিত্র দেখতে পান। এ ছাড়া টিএমএসএসের ইকোপার্কের ভেতরে নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে মাটি ফেলা এবং নদীর ভেতরে সীমানা পিলার পুঁতে রাখা দেখতে পান। করতোয়ার এই অংশ ভরাট করার দায়ে গত ২০ মার্চ টিএমএসএসকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, বর্ষা মৌসুমে যতদূর পানি স্পর্শ করে, ততদূর পর্যন্ত নদীর সীমানা—এ কথা উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, টিএমএসএস নদী দখল করে প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে। বগুড়া পৌরসভাও বর্জ্য ফেলে ভরাট করছে।
জানতে চাইলে বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বলেন, ট্রাকচালকদের যোগসাজশে টিএমএসএসের কর্মচারীরা পৌরসভার বর্জ্য ফেলে করতোয়া ভরাট করেছে। বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। করতোয়া দূষণের দায় টিএমএসএসের।
তবে নদী দখল–দূষণের অভিযোগ অস্বীকার করে টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বালুদস্যুদের কারণে পাড় ভেঙে টিএমএসএসের সম্পত্তি নদীর সীমানায় ঢুকেছে। মাপজোখ করে জমি ভরাট করে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।