থাইল্যান্ড থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নামানো হবে একটি কনটেইনার। ‘এমভি কোটা অঙ্গন’ জাহাজে করে আনা কনটেইনারটি হাতছাড়া করতে চায় না কাস্টমস ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এ কারণে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ভেড়ানোর পরই তৎপরতা শুরু হয়ে যায় কর্মকর্তাদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জেটিতে জাহাজ ভেড়ানোর পর নামানো হতে থাকে একে একে পণ্যভর্তি কনটেইনার। রাত সাড়ে ১১টায় সন্দেহজনক কনটেইনারটি নামানো হয়। এরপর জেটি চত্বর থেকে নেওয়া হয় বন্দর চত্বরে। দিবাগত রাত ১২টার দিকে কনটেইনারটি খোলা হয়। কনটেইনার খুলে পাওয়া যায় বিদেশি সিগারেট। একটানা চার ঘণ্টা, ভোর চারটা পর্যন্ত চলে সিগারেট গণনা। তাতে হিসাব মেলে, কনটেইনারটিতে ৫০ লাখ শলাকা মন্ড ব্র্যান্ডের সিগারেট রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এবং কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যৌথভাবে চালানটি জব্দ করেন। জব্দ করার পর চালানটি আনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বের করতে তৎপরতা শুরু করেছেন কর্মকর্তারা।
সাধারণত কোনো পণ্য চালানে সন্দেহজনক পণ্য থাকলে প্রথমে অনলাইনে সেই চালানটির খালাস স্থগিত করেন কর্মকর্তারা। এরপর চালানটির সঙ্গে যুক্ত সবাইকে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দিয়ে চালানটির কায়িক পরীক্ষা করা হয়। তবে চালানটি জব্দ করতে জাহাজ ভেড়ানোর পর থেকেই তৎপরতা শুরু হয় কর্মকর্তাদের।
এই তৎপরতার নেপথ্যের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মো. সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, থাইল্যান্ডে কনটেইনারটি জাহাজে বোঝাই করার পরই আমরা খবর পাই এটিতে অবৈধ পণ্য রয়েছে। অনেক সময় অবৈধ পণ্য চালান জব্দের তৎপরতা টের পেয়ে তা নিয়ম মেনে ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। চালানটি যাতে ফেরত নেওয়ার ন্যূনতম সুযোগ না পায়, সে জন্যই চালানটি জব্দ করতে এই তৎপরতা চালানো হয়েছে।’
এই চালানের প্রাথমিক আমদানি দলিলের তথ্য অনুযায়ী, চালানটির রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ডের এশিয়ান গ্লোবাল কোং লিমিটেড। চালানটি আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে ঢাকার হামকো করপোরেশনের নামে। তারা মূলত পানিশোধন যন্ত্র আমদানির ঋণপত্র খুলেছিল। তবে কোম্পানিটি মৌখিকভাবে কর্মকর্তাদের জানিয়েছে, তারা এই চালান আমদানি করেনি।
আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪-এর অনুচ্ছেদ ২৫ (১০) অনুযায়ী, আমদানিযোগ্য সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে বাংলায় সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ স্পষ্টভাবে মুদ্রিত থাকতে হবে। তবে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সিগারেট আমদানি করলে সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে এ ধরনের সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় মুদ্রণ করা যাবে। জব্দ করা সিগারেটের গায়ে এমন কোনো লেখা নেই। অর্থাৎ চোরাচালানের পাশাপাশি জব্দ এই সিগারেটের চালানটি আমদানি নিষিদ্ধ।
মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কেন সিগারেট আনা হচ্ছে, জানতে চাইলে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, সব শর্ত মেনে বৈধপথে সিগারেট আমদানিতে ৫৯৬ দশমিক ২০ শতাংশ শুল্ককর রয়েছে। অর্থাৎ সিগারেটের দাম যদি ১০০ টাকা হয় তাহলে শুল্ককর দিতে হবে ৫৯৬ টাকা। এই বিপুল পরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দিতেই মূলত মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সিগারেট এনেছে চক্রটি।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার এ কে এম খায়রুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, বাজারদর অনুযায়ী জব্দ করা সিগারেটের মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। এই সিগারেটের চালান আনার ঘটনায় কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে।