ভাঙচুরের পর যাত্রাবাড়ী থানা
ভাঙচুরের পর যাত্রাবাড়ী থানা

যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা

মন্ত্রিপরিষদ সচিবও মামলার আসামি কি না, আলোচনা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলি করে হত্যার ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। যেখানে আসামিদের তালিকার ৪ নম্বরে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে মো. মাহাবুব হোসেনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তিনি বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মাহবুব হোসেনের আগে আরও ২৩ জন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। তবে তাঁদের মধ্যে মাহবুব নামে কেউ নেই। ফলে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনকেই মামলার আসামি করা হলো কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে।

এর কারণ হচ্ছে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় রোববার করা ওই মামলায় আসামিদের তালিকায় আরও আছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও আহমেদ কায়কাউস, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও ফয়েজ আহমেদ এবং সাবেক সচিব আনিসুর রহমান (নির্বাচন কমিশনারও ছিলেন)।

মামলার বিষয়টি নিয়ে রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরে তাঁর একান্ত সচিব কাজী শাহজাহানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। কিন্তু তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এর আগে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক দুজন মুখ্য সচিবকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও আবুল কালাম আজাদ। এর মধ্যে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ছিলেন আর আবুল কালাম আজাদ গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

একের পর এক মামলায় ঢালাওভাবে আসামি করার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আইনবিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, হত্যা মামলা করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হয়। কিন্তু এখনো ঢালাওভাবে আসামি করা হচ্ছে। থানায় মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়ে সরকারের দিক থেকে সুনির্দিষ্টভাবে দিকনির্দেশনা থাকা দরকার।

আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ঢালাওভাবে আসামি করার ঘটনাগুলো ছাত্র–জনতার আন্দোলনের ফসলকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ঢালাওভাবে মামলা ও আসামি করা হলে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারেন।

যাত্রাবাড়ীর হত্যা মামলা

মামলার এজাহারে বলা হয়, যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগে গত ১৯ জুলাই বিকেলে ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। তখন কামরাঙ্গীরচরের টেকেরহাট ইউনিট আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোকনসহ অন্য নেতারা ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে সশস্ত্র হামলা করেন। ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে বুলেট ও গুলি ছোড়া হয়। একপর্যায়ে মেহেদী হাসান (১৮) নামের এক তরুণের থুতনিতে গুলি লাগে। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ওই ঘটনায় নিহত মেহেদীর চাচা মো. নাদিম রোববার যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুক আহম্মেদ। এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি।

এ মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ২২৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৯৩টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। অধিকাংশ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা, পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও সাবেক বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিগত সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পেশার শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।