হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় কম্বল পেলেন শীতার্তরা

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পানবারা আশ্রয়ণ প্রকল্পসংলগ্ন মাঠে প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল বিতরণ করা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

‘এলা বয়স হইচে, বাপু। কানে শুনা পাউ না। ঠান্ডাতে বেড়ানেড়া (হাটাচলা) করিবা পারু না। কম্বলডা দিলেন, ভালোয় হইল। আইতোত (রাতে) ঢাকা নিবা পারিম।’ আজ বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পানবারা আশ্রয়ণ প্রকল্পসংলগ্ন মাঠে কম্বল পেয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ৯০ বছর বয়সী কান্দুরী বেওয়া। এদিন এডিসন ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ও প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে অসহায়, দুস্থ ও প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে ২০০ কম্বল বিতরণ করা হয়।

সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন ধরেই উত্তরের এই জনপদে বইছে হিমালয় থেকে আসা হিমেল বাতাস।

তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। উত্তরের হিমেল বাতাস আর হাঁড়কাঁপানো শীতে সকালে জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পানবারা আশ্রয়ণ প্রকল্পসংলগ্ন মাঠে জড়ো হয়েছেন নানা বয়সী ১৫০ জন নারী-পুরুষ। এডিসন ফাউন্ডেশনের সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া কম্বল নিয়ে সেখানে হাজির হন পঞ্চগড়ের প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।

আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পানবারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ফুলজান বেগম বলেন, ‘হামার (আমাদের) গুচ্ছগ্রামের ঘরের টিনলা কানা (ফুটো) হয়ে গেইছে। বর্ষার সময় পানি ঢুকেচে, শীতের সময় কুয়াশা আর বাতাস ঢুকেচে। ঠান্ডাতে থাকিবা পারি না। হামার কেহো খোঁজ নেয় না। এইবার তোমরায় পরথম কম্বল দিলেন। জারখানোত কম্বল দিয়ে খুপে (খুব) উপকার করলেন, বাপু।’

ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পানবারা আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে আসা ১৫০ জন অসহায়, দুস্থ ও প্রতিবন্ধী মানুষকে একটি করে কম্বল তুলে দেওয়া হয়। কম্বল বিতরণের সময় আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসফিকুল আলম হালিম, আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা, প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি রাজিউর রহমান, পঞ্চগড় প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি রায়হান শরীফসহ প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বন্ধুসভার সদস্যরা অসহায় শীতার্ত মানুষের হাতে কম্বল তুলে দেন। বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পানবারা আশ্রয়ণ প্রকল্পসংলগ্ন মাঠে

বিকেলে বন্ধুসভার সদস্যরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন, জেলা শহরের ডোকরোপাড়া, রামের ডাঙ্গা, মসজিদপাড়া ও তালমা এলাকায় দরিদ্র মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আরও ৫০টি কম্বল বিতরণ করেন। এভাবেই আজ দিনভর ২০০টি কম্বল বিতরণ করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।

পানবারা আশ্রয়ন প্রকল্পসংলগ্ন মাঠে কম্বল পেয়ে কান্দুরী বেওয়া (৯০) বলেন, ‘এলা বয়স হইচে, বাপু। কানে শুনা পাউ না। ঠান্ডাতে বেড়ানেড়া (হাটাচলা) করিবা পারু না। কম্বলডা দিলেন ভালোয় হইল। আইতোত (রাতে)  ঢাকা নিবা পারিম।’

কম্বল পেয়ে আছিম উদ্দিন নামের এক বৃদ্ধা বলেন, ‘দুই-তিন বছর তে (থেকে) হামেরা (আমরা) কুনো (কোন) কম্বল পাই না। এইবার তোমরা কম্বল দিবা আইসে উপকার করলেন। ঠান্ডাখানোত খুপে কষ্ট হচে। এই কম্বলখান পায়া এলা শন্তিতে ঘুমাবা পারিম। মুই তোমহার তানে দুয়া করিম, বাপু।’

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।

অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে।

বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।