ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবকেরা ত্রাণ প্যাকেজিংয়ের কাজ করছেন। ঢাকা, ২৪ আগস্ট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবকেরা ত্রাণ প্যাকেজিংয়ের কাজ করছেন। ঢাকা, ২৪ আগস্ট

বানভাসিদের পাশে দেশের মানুষ

* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে টাকা ও নানা সামগ্রী নিয়ে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ।

* আস সুন্নাহ্ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের সহায়তার জন্য ২০ কোটি টাকার বেশি অনুদান পেয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে তারা বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে।

বন্যাদুর্গত মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দেশের মানুষ। ব্যক্তি উদ্যোগে, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে ও সংগঠনের উদ্যোগে সংগ্রহ করা হচ্ছে টাকা, খাদ্য, বস্ত্র, সুপেয় পানি ও অন্যান্য সামগ্রী। সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দুর্গত ব্যক্তিদের কাছে।

বন্যাদুর্গতদের জন্য সরকারি ত্রাণসহায়তা ও অন্যান্য উদ্যোগ রয়েছে। উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‍্যাব এবং ফায়ার সার্ভিস। এসবের বাইরে বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছে সাধারণ মানুষ ও বেসরকারি খাত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এখন বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণসহায়তাসংক্রান্ত পোস্টই বেশি। তাতে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বন্যার্তদের সহায়তার জন্য টাকা তুলছেন। অনেকে রাস্তাঘাটে অর্থসহায়তা না দিয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাংগঠনিক উদ্যোগের কাছে। শিশুরা তাদের জমানো টাকা দিচ্ছে, চাকরিজীবীরা তাঁদের একদিনের বেতন বন্যাদুর্গতদের দিচ্ছেন, খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে বিপুল খাদ্যসামগ্রী।

সহায়তার ক্ষেত্রে ধর্মীয় ভেদাভেদও নেই। সব ধর্মের মানুষ অংশ নিচ্ছেন। তা দেখে অনেকেই বলছেন, ‘এটাই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ হারতে পারে না।’

কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টি ও উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে ঢলে বন্যাদুর্গত হয়েছে দেশের ১২টি জেলা। সরকারি হিসাবে, মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫১ লাখ মানুষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) সামনে সারা দিনই যানবাহনের জটলা থাকে, মানুষের ভিড় থাকে। মানুষ ভিড় করছেন বানভাসিদের জন্য সহায়তা নিয়ে।

জনসাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে নগদ অর্থসহ হরেক রকম সামগ্রী তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন সেটিও এক অনন্য দৃষ্টান্ত। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টিএসসিতে থেকে দেখা গেল পুরো কাজটি সম্পন্ন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ভাবে আর দ্রুততার সঙ্গে। এই ত্রাণকাজ চলছে ’বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’এর ব্যানারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজে হাত লাগিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রীর পাশাপাশি জমা পড়ে ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা। দিনভর ত্রাণ সংগ্রহের পর রাতে প্যাকেজিংয়েও অংশ নেন ছাত্রছাত্রীরা। পরে রাতেই কয়েকটি ট্রাকে করে দুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়। শুক্রবার কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে ১ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ১৯৬ টাকা জমা পড়ে। পাশাপাশি জমা পড়ে প্রায় ৫০ ট্রাক ত্রাণসামগ্রী। প্যাকেজিংয়ের পর টিএসসি থেকে প্রতি রাতে দুর্গত এলাকায় যাচ্ছে ত্রাণের ট্রাক।

ত্রাণসহায়তায় সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাও এগিয়ে এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তর, সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়গুলোর উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

আস সুন্নাহ্ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ত্রাণের প্যাকেট প্রস্তুত করা হয়েছে

আস সুন্নাহ্ ফাউন্ডেশনের ত্রাণ তৎপরতা

সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আস সুন্নাহ্ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের সহায়তার জন্য ২০ কোটি টাকার বেশি অনুদান পেয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে তারা বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। আজ ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে জানানো হয়, স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় আজ সারা দিনে ৯ লরি ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত করা হয়েছে। এগুলো ইতিমধ্যে দুর্গত এলাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। ৫টি লরিতে আছে ৫ হাজার পরিবারের জন্য ভারী প্যাকেজ। প্রত্যেক পরিবারের জন্য রয়েছে ১০ কেজি চাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি চিনি ও ১ কেজি লবণ। ৪টি লরিতে যাচ্ছে ৭ হাজার ৬০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। প্রত্যেক প্যাকেটে রয়েছে ২ কেজি খেজুর, ২ কেজি চিড়া, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি চিনি ও বোতলজাত পানি। এ ছাড়া ত্রাণ সামগ্রীতে রয়েছে মোমবাতি, দিয়াশলাই ও স্যানিটারি ন্যাপকিন।

এসব ত্রাণসামগ্রী নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন স্পটে বিতরণ করা হবে।

আরও সহায়তা

বন্যাদুর্গতদের কী কী প্রয়োজন, সে অনুযায়ী ত্রাণ দিচ্ছেন অনেকে। বন্যায় ত্রাণসহায়তার তালিকায় বিশুদ্ধ পানি, শিশুদের খাবার, নারীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন, লাইফ জ্যাকেট, স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, বুট জুতা, ওষুধ—এমন অনেক দরকারি পণ্য যোগ হচ্ছে।

বেসরকারি সংগঠন সংযোগের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ জামাল ত্রাণ বিতরণকাজে সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অনেক টাকা ও ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে দুর্গম এলাকায় এখনো ত্রাণসহায়তা সেভাবে পৌঁছানো যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার।