আদালত
আদালত

পার্বতীপুরে ঋণের ‘ভয়ংকর ফাঁদ’

স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলেন আদালত

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ঋণের ‘ভয়ংকর ফাঁদের’ ঘটনায় স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দিনাজপুরের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইব্রাহিম আলীর আদালত গতকাল মঙ্গলবার ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ (১) (গ) ধারা অনুযায়ী বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। দিনাজপুরের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রবিউল ইসলাম আদালতে স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্তের নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত সোমবার প্রথম আলোয় ‘পার্বতীপুরে ঋণের ভয়ংকর ফাঁদ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই আদেশ দেন। আদেশে আগামী এক মাসের মধ্যে সরেজমিনে তদন্ত এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পার্বতীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজন হলে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আলামত জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ রেখেছেন আদালত।

বিচারক তাঁর আদেশে উল্লেখ করেন, এই চক্র বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্প নিয়ে প্রতারণা করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করেছে, যা পত্রিকার মাধ্যমে উঠে এসেছে। এই চক্রের সঙ্গে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও জড়িত। এই চক্র মানুষের সরলতার সুযোগে নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে চলেছে। মূলত চক্রের কৃতকর্ম দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।

আদালতের আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বতীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চিত্তরঞ্জন রায় প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মৌখিকভাবে বিষয়টি জেনেছেন। কিন্তু আদালতের আদেশের অনুলিপি এখনো পাননি। আদেশের অনুলিপি পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

সোনালী ব্যাংকের দিনাজপুরের পার্বতীপুরের হুগলীপাড়া শাখায় উপজেলার প্রায় এক হাজার শিক্ষকের সঞ্চয়ী হিসাব আছে। তাঁরা সেখান থেকে বেতন-বোনাস তোলেন। আর্থিক সংকটে পড়লে ব্যক্তিগত ঋণ নেন। এই সুযোগ কাজে লাগায় একটি চক্র। শিক্ষকসহ অন্যদের তাঁরা ঋণের ফাঁদে ফেলে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালে চক্রটি বেপরোয়াভাবে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা দিতে শুরু করে। সে সময় থেকে গত মে মাস পর্যন্ত পার্বতীপুরের ১৫ শিক্ষকসহ ২৮ ব্যক্তি মামলায় গ্রেপ্তার হন।

পার্বতীপুরের সিরাজুল হুদা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন যোগেন্দ্র নাথ রায়। তিনি ও তাঁর স্ত্রী দয়া রানী রায়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দেয় চক্রটি। সহকর্মীদের ভাষ্য, যোগেন্দ্র গ্রেপ্তার আতঙ্কে ছিলেন। তিনি গত ১৩ নভেম্বর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সম্প্রতি পার্বতীপুরের সরকারি বঙ্গবন্ধু উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী স্বপন কুমার পাল আত্মহত্যা করেন। সহকর্মীদের ভাষ্য, তিনি চক্রটির খপ্পরে পড়ে আত্মহত্যা করেন।