গত সোমবার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন চুয়েটের শিক্ষার্থী তৌফিক হোসাইন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে শেষ কথা বলেন তিনি।
গত সোমবার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন চুয়েটের শিক্ষার্থী তৌফিক হোসাইন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে শেষ কথা বলেন তিনি।

দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু

‘আমার জন্য দোয়া কইরেন ভাই, আমার মনে হয় সময় শেষ’

‘দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে যাচ্ছিলাম আমরা। রাস্তার মাথা এলাকায় পৌঁছালে তৌফিক বলে ওঠে, আমার জন্য দোয়া কইরেন ভাই, আমার মনে হয় সময় শেষ।’ এই কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু।

এরপর কিছুক্ষণ স্তব্ধ থাকলেন জাকারিয়া। এরপর বললেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সে থাকা এক বড় ভাইয়ের হাত ধরে আমি বলি, ভাই কিছু করেন।…’

জাকারিয়া হিমু চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গত সোমবার একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও দ্বিতীয় বর্ষের তৌফিক হোসাইনের সঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছিলেন। মোটরসাইকেলে করে চুয়েট ক্যাম্পাসের পাশেই রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শান্তিরহাট এলাকায় যান তাঁরা। সেখান থেকে আবার ফিরে আসতে গিয়ে জিয়ানগর এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন।

শাহ আমানত পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাস মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলে শান্ত সাহা ও তৌফিক হোসাইনের পড়ে থাকার দৃশ্য সেদিনই ভাইরাল হয়েছিল। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় জাকারিয়া জানান সেদিনের অভিজ্ঞতা।

৬ মিনিটের ভিডিওতে জাকারিয়া হিমু বেশ কয়েকবার কথা বলতে গিয়ে কেঁদেছেন। তিনি বলেন, সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেজেন্টেশন শেষ করে তৌফিক ও তিনি ক্যাম্পাসের রাস্তায় হাঁটছিলেন। পরে শান্ত সাহার সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়।

তিনজন মিলে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুরতে বের হন। শান্তিরহাট এলাকায় পৌঁছানোর পর আবার ফিরে আসেন। এর মধ্যে হঠাৎ বাসটি মোটরসাইকেলের সামনে চলে এসে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনার পর তৌফিক তাঁর মাকে ফোন করে বলেন, ‘মা আমার হাত–পা ভেঙে গেছে।’ এ কথা বলেই ফোন কেটে দেন।

এরপর স্থানীয় লোকজন সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান তাদের। সেখান থেকে শান্তকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তৌফিক ও জাকারিয়া হিমুকে নিয়ে যাওয়া হয় বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে। তবে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানোর আগেই তৌফিক ও শান্তর মৃত্যু হয়।

দুই সহপাঠীর মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পর গত সোমবার বিকেল থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন পুড়িয়ে দেওয়া হয় শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস। পাশাপাশি আরও দুটি বাস ভাঙচুর করে ক্যাম্পাসে ঢুকিয়ে রাখা হয়। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে যান চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরে আন্দোলনের মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত চলা একাডেমিক কাউন্সিলের ১৫১তম জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত সব পক্ষকে জানানো হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হল না ছেড়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। রাত ১০টার দিকেও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছিলেন।