ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, তিনি বা তাঁর লোকজন এখনো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছেন। ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রের শীর্ষস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তির বিবৃতি প্রদান প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতা নিয়ে অনুষ্ঠান শেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দুই পাতা বিজ্ঞাপন দিতে অন্তত দুই মিলিয়ন ডলার (২০ কোটি টাকার বেশি) লাগে। সে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে একটি বিজ্ঞাপনের মতো কয়েকজনের স্বাক্ষর নিয়ে...।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিদের অর্ধেকের বেশি অবসরপ্রাপ্ত উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) বা তাঁর লোকজন এখনো অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকার আদালতে মামলা চলছে। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ওই খোলাচিঠি পাঠানো হয়েছে, যাতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি–মুনসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম রয়েছে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার তাদের ওয়েবসাইটে এ চিঠি প্রকাশ করে।
ওই চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, এটা হতাশাজনক যে একজনকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য অব্যাহতভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। অতীতে কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক মর্যাদা শুধু যে তাদের গুণের কারণে হয়েছে সেটি নয়, এর পেছনে অনেক বিনিয়োগ আছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে যেসব মামলা চলছে, সেগুলোয় সরকারের কোনো প্রভাব ছিল না এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন এবং বিচার বিভাগ যেটা মনে করে, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সেভাবে বিচার চলছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনদের খোলাচিঠিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বিচার স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘একটি বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করার আহ্বান এর আগে শুনিনি এবং আমি মনে করি না, যাঁরা এই আবেদনে সামিল হচ্ছেন, তাঁরা তাঁদের সুনামের প্রতি সুবিচার করছেন।’
এই বিচারপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করলে তাতে বাংলাদেশ সরকার স্বাগত জানাবে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, কিন্তু একজন ব্যক্তি যিনি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, যিনি শত শত হাজার হাজার মানুষকে নিয়োগ করেছেন, যাঁর সম্পত্তি আছে, তাঁর আইনগত বিষয় থাকতে পারে। তার মানে এই নয় যে তিনি অপরাধী হয়ে যাবেন বা সেটি তদন্ত করা যাবে না। পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যক্তি কি আছেন, যাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা যাবে না বা তদন্ত করা যাবে না?
এই বিবৃতি নিয়ে সরকার বিচলিত বা চিন্তিত নয় জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা স্বাধীন, বিচার বিভাগই সিদ্ধান্ত নেবে এবং বিচার চলবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব আছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আপনারা ১–১১ ঘটনাপ্রবাহ জানেন। কিন্তু তারপর ১৫ বা ১৭ বছরে আমাদের দিক থেকে কিছু নেই।’
প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে সরকার বা দূতাবাস বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন করে কিছু বলার বা ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। কারণ, এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁদের সাহস থাকতে হবে বিচারের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার।