টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে পররাষ্ট্র, অর্থ, শিক্ষাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নতুন মুখ এনেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ গ্রহণের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বিদায়ী মন্ত্রিসভার ৩০ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। ফলে ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নতুন মুখ এসেছে। এ ছাড়া আগের মন্ত্রিসভার কয়েকজনকে নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হলেও কারও কারও মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করা হয়েছে। এ কারণে এগুলোতেও নতুনেরা এসেছেন। সব মিলিয়ে অর্থ, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ অনেকগুলো মন্ত্রণালয়েই নতুন মুখ এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় রয়েছে।
এবার অর্থমন্ত্রী পদে এসেছে নতুন মুখ। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে দেওয়া হয়েছে সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। মেয়াদ শেষ করে বিদায় নেওয়া মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি স্থান পাননি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও এসেছেন নতুন মন্ত্রী। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন বিদায়ী মন্ত্রিসভার তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ। এত দিন এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন এ কে আব্দুল মোমেন এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন শাহরিয়ার আলম। কিন্তু এই দুজনকেই নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। নতুন মন্ত্রিসভায় শুধু হাছান মাহমুদকেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি একসময় এই মন্ত্রণালয়ে বেশ কিছু দিন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
শিক্ষামন্ত্রীর পদেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। বিদায়ী মন্ত্রিসভায় এই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মহিবুল হাসান চৌধুরীকে পূর্ণ মন্ত্রী করে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আর বিদায়ী মন্ত্রিসভার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী করা হয়েছে। আগের মন্ত্রিসভার সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।
এবারই প্রথম মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একসময় তিনি ক্ষমতাসীন দলের হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। এত দিন এই মন্ত্রণালয় সামলেছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। এবারের মন্ত্রিসভায় তিনি স্থান পাননি।
সদ্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের জায়গায় এসেছেন খ্যাতিমান চিকিৎসক সামন্ত লাল সেন। তাঁকে টেকনোক্র্যাট (সংসদ সদস্য নন) মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ-৯ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুস সালামকে দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। বিদায়ী মন্ত্রিসভার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।
নতুন মন্ত্রিসভায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান। এত দিন এই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন না। প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীই এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। কিন্তু ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সায়েদুল হকের (ব্যারিস্টার সুমন) কাছে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। নতুন মন্ত্রিসভায় তাঁর ঠাঁই হয়নি।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন এবার প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এত দিন এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহমেদ। তিনি এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন খুলনার সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। বিদায়ী মন্ত্রিসভায় ভূমিমন্ত্রী ছিলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। কিন্তু তিনি এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। এবার নতুন দায়িত্ব পাওয়া নারায়ণ চন্দ্র চন্দ একসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। আগের মন্ত্রিসভায় এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন গাজী গোলাম দস্তগীর। নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি তিনি।
আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমানকে দেওয়া হয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এত দিন এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন শ ম রেজাউল করিম। তিনি এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।
রেলপথ মন্ত্রণালয়েও এসেছে নতুন মুখ। এবার এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জিল্লুল হাকিম। আগের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম এবারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হননি।
যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান। আগে এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবারের মন্ত্রিসভায় নেই।
সাবের হোসেন চৌধুরীকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এত দিন তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষ দূতের দায়িত্বে ছিলেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বিদায়ী মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সিমিন হোসেন রিমি। গাজীপুরের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। আগে এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ফজিলাতুন নেছা।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এত দিন এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে এসেছে নতুন মুখ। এবার এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে এসেছেন পটুয়াখালীর সংসদ সদস্য মো. মহিববুর রহমান। আগে এই দায়িত্বে ছিলেন এনামুর রহমান; যিনি এবারের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন মোহাম্মদ আলী আরাফাত। এই মন্ত্রণালয়ে এবার পূর্ণমন্ত্রী কাউকে দেওয়া হয়নি। এত দিন পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা হাছান মাহমুদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। ফলে মোহাম্মদ আলী আরাফাত একাই সামলাবেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
এ ছাড়া প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী। এত দিন ইমরান আহমেদ এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন; যিনি এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য রুমানা আলী। আগে এই দায়িত্বে ছিলেন জাকির হোসেন; যিনি এবার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভার নতুন প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলামের হাতে দেওয়া হয়েছে। আগের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।