বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি

দরকার কমপক্ষে ৫৪৫ কোটি টাকা

৭২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ৬ লাখ ৬৩ হাজার গবাদিপশু এবং ২ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত। মারা গেছে ৫৫ জন।

গত জুন মাসের বন্যায় দেশের নয়টি জেলার ৭২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোট মারা গেছে ৫৫ জন। যাদের বেশির ভাগই পানিতে ডুবে। মূলত হাওর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত দেশের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের এসব জেলায় ১৫ লাখ মানুষের জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। আর এ কাজে দরকার হবে ৫৪৫ কোটি টাকা। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় জাতিসংঘের বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির ওই হিসাব চূড়ান্ত করা হয়েছে।

তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, জাতিসংঘের এই হিসাবের বাইরে তারা নিজেরাও এককভাবে একটি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরি করেছে। ওই ক্ষতি নিয়ে আজ সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে।

সেখানে ওই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পর্যালোচনা করে জরুরি ভিত্তিতে কোন এলাকায় এবং কোন খাতে কী ধরনের সহায়তা দিতে হবে তার হিসাব চূড়ান্ত করা হবে। সেই হিসাব নিয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সরকার বৈঠক করবে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সহায়তা নিয়েও আলোচনা হবে।

প্রাকৃতিক নানা কারণে বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছর কমবেশি বন্যা হয়। তবে এবারের বন্যার সবচেয়ে নেতিবাচক দিক হচ্ছে হাওর এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং সামাজিক গোষ্ঠীগুলো বন্যার্তদের সহায়তায় খুব বেশি সক্রিয় ছিল না।
হোসেন জিল্লুর রহমান, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ

এ ক্ষয়ক্ষতি পোষাতে সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত বন্যার্ত মানুষকে ১৭ কোটি ২০ লাখ টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে ১৩ হাজার টন চাল, ১ লাখ ৬৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও আট হাজার বান্ডিল টিন দেওয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বীজ, সারসহ নানা ধরনের কৃষি উপকরণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হঠাৎ নামা বন্যায় দেশের হাওর এলাকায় অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে। আমরা সেই ক্ষতি মোকাবিলায় সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা নিয়ে আলোচনা করব।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা সুনামগঞ্জ। ক্ষতিগ্রস্ত অন্য জেলাগুলো হচ্ছে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলা। সাধারণত উজান থেকে আসা ঢলের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া এ বন্যা তিন থেকে পাঁচ দিন স্থায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু এ বন্যা প্রায় দুই সপ্তাহ স্থায়ী ছিল।

জানতে চাইলে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাকৃতিক নানা কারণে বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছর কমবেশি বন্যা হয়। তবে এবারের বন্যার সবচেয়ে নেতিবাচক দিক হচ্ছে হাওর এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং সামাজিক গোষ্ঠীগুলো বন্যার্তদের সহায়তায় খুব বেশি সক্রিয় ছিল না।

বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের আমলা ও স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সব কাজ করতে হবে, এমন মানসিকতা দূর করে সামাজিক শক্তিগুলোকে কাজে লাগালে এ ধরনের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত মোকাবিলা করা সম্ভব।