প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে ৯৮ শতাংশ কোনো না কোনো সময় বৈষম্যমূলক আচরণ ও নিগ্রহের শিকার হন।
নিগ্রহের অভিযোগ করেও প্রতিকার না পাওয়ার হার ৪২ শতাংশ।
মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। শহরের চেয়ে গ্রামে প্রতিবন্ধীর হার বেশি। সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী খুলনা বিভাগে।
দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ৪৬ লাখ। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তাঁদের ৯৮ শতাংশ কোনো না কোনো সময় বৈষম্যমূলক আচরণ ও নিগ্রহের শিকার হন। একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি দুর্ব্যবহারের শিকার হন প্রতিবেশীর কাছ থেকে। এ হার ৯১ শতাংশ। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, ইউপি চেয়ারম্যান বা প্রতিবেশীর কাছে নিগ্রহের অভিযোগ করেও প্রতিকার না পাওয়ার হার ৪২ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জরিপের ফল বলছে, দেশে এখন মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রতিবন্ধী। সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ। এর মধ্যে ২ দশমিক ৮ শতাংশ হিসাব করলে ৪৬ লাখ প্রতিবন্ধী, যাঁদের অন্তত এক ধরনের প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, মোট ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ প্রকল্পের পরিচালক ইফতেখাইরুল করিম জানান, জরিপটি করার উদ্দেশ্য, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যান তৈরি করা, যাতে করে তাঁদের উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসা যায়। তাঁদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধিতা শারীরিক, এ হার ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এরপর আছে যথাক্রমে দৃষ্টি ও শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা। সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি পাওয়া গেছে খুলনা বিভাগে, ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে যথাক্রমে রংপুর (৩ দশমিক ৫৪) ও রাজশাহী বিভাগে (৩ দশমিক ৩০)।
২০২১ সালের ২ নভেম্বর থেকে একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈবচয়নের ভিত্তিতে মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। নমুনা এলাকা ঠিক করে ৩৬ হাজার খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধিতার কারণ হিসেবে ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, জন্মগত সমস্যা। ৩৬ শতাংশ বলেছেন, অসুস্থতা। গাছ বা ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে প্রতিবন্ধী হওয়ার কথা বলেছেন ১২ শতাংশ। বয়সভিত্তিক প্রতিবন্ধিতার হিসাবে দেখা যায়, ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতিবন্ধীর হার বেশি।
প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ইফতেখাইরুল করিম বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে এটি দেশে প্রথম বিস্তারিত একটি জরিপ।
জরিপে দেখা যায়, দেশে মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ ফাংশনাল ডিফিকাল্টি রয়েছে। বিবিএস বলছে, যাঁদের স্বাভাবিক চলাফেরায় কোনো না কোনো সমস্যা আছে, সেটাই ফাংশনাল ডিফিকাল্টি। সেটি হতে পারে চশমা ব্যবহারের পরও দেখতে সমস্যা কিংবা শ্রবণযন্ত্র ব্যবহারের পরও শুনতে সমস্যা। দৈনন্দিন কাজে সমস্যা ও কোনো কিছু মনে রাখতে সমস্যা হওয়া।
জরিপে দেখা যায়, তিন বছর বা এর বেশি বয়সের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ৫৫ শতাংশের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। প্রতিবন্ধিতার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় তারা দেরিতে পড়াশোনা শুরু করে। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী শিশুদের ৩৫ শতাংশ প্রাথমিক স্তরে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৪৯ শতাংশ মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা করেছেন।
জরিপে দেখা যায়, ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি ৩ জনে ১ জন কর্মে নিয়োজিত। যাঁদের অধিকাংশই আত্মকর্মসংস্থানে যুক্ত। নিবন্ধন রয়েছে, এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে ভাতা পাচ্ছেন ৯১ শতাংশ।
প্রতিবন্ধী জরিপটি আরও আগে করা উচিত ছিল উল্লেখ করে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অনেকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন। এটা বন্ধ করতে হবে।