নারী নির্যাতনের ঘটনার তুলনায় বিচার চাওয়ার হার অনেক কম। সামাজিক সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতায় অনেক নারী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না। এ অবস্থার পরিবর্তনে বিচার চাইতে নারীর আস্থা বাড়ানোর জন্য সেবাপ্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
আজ বুধবার জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্রিস্টিন ব্লুখোস প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এসে এসব কথা বলেন। তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে প্রথম আলোর সঙ্গে অংশিদারত্ব আরও বাড়ানোর আশা প্রকাশ করেন।
প্রথম আলো কার্যালয়ে এ সাক্ষাতের সময় সম্পাদক মতিউর রহমান অ্যাসিড সহিংসতা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসহ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে ও কন্যাশিশুর উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রথম আলো ট্রাস্ট ও শিক্ষাবৃত্তির কথা উল্লেখ করেন। তিনি মেয়ে শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় ইউএনএফপিএর সঙ্গে প্রথম আলো ডটকমের যৌথ আয়োজন ‘কথা হোক’ নামে প্রচারাভিযানের তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই উদ্যোগ তিন মাস মেয়াদের। মেয়াদ বাড়িয়ে বছরজুড়ে এ কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। তরুণ প্রজন্ম এখন অনলাইনমুখী। ফলে বড় পরিসরে অংশদারত্বের ভিত্তিতে নানা ধরনের কার্যক্রম নেওয়া যেতে পারে।
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ক্রিস্টিন ব্লুখোস প্রথম আলোর সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ ক্ষেত্রে প্রথম আলোর গ্রহণযোগ্যতা ও বেশিসংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছানোর সক্ষমতার সঙ্গে ইউএনএফপিএর কাজের দক্ষতার সমন্বয় করে কার্যক্রম নেওয়া যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ক্রিস্টিন ব্লুখোস বলেন, ২০১৫ সালে নারী নির্যাতনের ওপর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি জরিপ প্রতিবেদনের জন্য ইউএনএফপিএ অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা করেছিল। ওই সময় দেখা গিয়েছিল, নির্যাতনের শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ থানায় অভিযোগ করেছিল। এ হার খুব উদ্বেগজনক। সেবা কার্যক্রমগুলো শক্তিশালী করলে নারীরা অভিযোগ জানাতে আস্থা পাবেন। ইউএনএফপিএ বিবিএসের সঙ্গে নতুন আরেকটি জরিপে অর্থায়ণ ও কারিগরি সহায়তা করেছে বলে জানান তিনি।
ক্রিস্টিন ব্লুখোস বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ইউএনএফপিএর কাজের পরিসর বড়। ইউএনএফপিএ নারীর স্বাস্থ্য, মেয়েদের শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর বিরুদ্ধে পারিবারিক নির্যাতনসহ সব ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে। তাঁর মতে, নারীর বিরুদ্ধে সামাজিক কিছু আচার-আচরণ আছে, যার বিরুদ্ধে কথা বলা প্রয়োজন। যেমন বাল্যবিবাহ, ছেলে সন্তানের প্রতি পক্ষপাত। ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব আচরণ প্রতিরোধে কাজ করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার নারী নির্যাতন বন্ধে কাজ করছে। কিন্তু আরও অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকি আছে।
সৌজন্য সাক্ষাতের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএনএফপিএর জনসংযোগ বিভাগের প্রধান আসমা আক্তার, জেন্ডার বিভাগের কর্মকর্তা আবু নাসের, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন ও হেড অব ডিজিটাল বিজনেস এ বি এম জাবেদ সুলতান।