সরকারি–বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) বড় প্রকল্পের একটি ঢাকা উড়ালসড়ক (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) প্রকল্প। বাংলাদেশ ছাড়া থাইল্যান্ড ও চীনভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ এবং নির্মাণকাজের মাধ্যমে এই উড়ালসড়কের অংশীদার।
চুক্তি অনুসারে, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নকশা প্রণয়ন, নির্মাণকাজের অর্থ জোগাড় করবে এবং উড়ালসড়ক চালুর পর তা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। ২৫ বছর পর বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিনিয়োগকারীরা উড়ালসড়কটি হস্তান্তর করবে। এর আগে টোল আদায় করে বিনিয়োগ করা অর্থ সুদাসলে তুলে নেবে বিনিয়োগকারীরা।
২০০৯ সালে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নেওয়া হয়। উড়ালসড়কের পথ চূড়ান্ত করা ও নকশা প্রণয়নেই দুই বছর চলে যায়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে প্রথমে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাইল্যান্ডভিত্তিক ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে নির্মাণ চুক্তি সই হয়। ওই বছর ৩০ এপ্রিলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুরুতে ইতাল–থাই কোম্পানির সঙ্গে ৮ হাজার ৭০৩ কোটি টাকায় চুক্তি হয়। সাড়ে তিন বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করে উড়ালসড়কটি চালু করার কথা ছিল। কিন্তু সময়মতো কাজ শুরু না হওয়ায় ও নকশায় কিছু পরিবর্তন আনার কারণে ২০১৩ সালে ২৩৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে চুক্তি সংশোধন করা হয়।
চুক্তি অনুসারে, মূল কাঠামো নির্মাণ ব্যয়ের ৭৩ শতাংশ জোগান দেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। আর ২৭ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার। যা ভায়াবিলিটি গ্যাপ (ভিজিএফ) নামে পরিচিত। ভিজিএফ হিসেবে সরকারের ২ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা দেওয়ার কথা মগবাজার পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ হওয়ার পর।
বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি অনুসারে, উড়ালসড়ক দিয়ে দিনে সর্বোচ্চ প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করবে বলে ধারণা করা হয়, আর সর্বনিম্ন যানবাহন চলাচল করতে পারে সাড়ে ১৩ হাজার। ৮০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করলে বাড়তি যে টোল আদায় হবে, এর ২৫ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে। অন্যদিকে সাড়ে ১৩ হাজারের চেয়ে কম যানবাহন চলাচল করলে বিনিয়োগকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সরকারের। চুক্তিতে বলা আছে, একটানা ১৫ দিন দৈনিক গড়ে সাড়ে ১৩ হাজারের কম যানবাহন চলাচল করলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিনিয়োগকারীকে চুক্তির চেয়ে বাড়তি সময় টোল আদায় করার সুযোগ দিতে হবে।
বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি অনুসারে, উড়ালসড়কটি ২৫ বছর তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এর মধ্যে নির্মাণ সময় সাড়ে তিন বছর। অর্থাৎ বিনিয়োগকারী সাড়ে ২১ বছর টোল আদায় করে অর্থ নিয়ে যাবে। এ সময়ের মধ্যে কখনো টানা ১৫ দিন সাড়ে ১৩ হাজারের কম যানবাহন চলাচল করলে সময় বাড়িয়ে ক্ষতিপূরণ শোধ করতে হবে।
চুক্তি অনুসারে, বিনিয়োগকারীদের অধীনে থাকা অবস্থায় উড়ালসড়ক থেকে বাংলাদেশ ফি হিসেবে পাবে মাত্র ২৭২ কোটি টাকা। তবে তা একবারে নয়, বছর বছর দেবে তারা। কোন বছর কত টাকা দেবে, এর একটা তালিকাও চুক্তিতে রয়েছে।
উড়ালসড়ক নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ফাস্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে লিমিটেড কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। এতে ইতাল–থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানির শেয়ার ৫১ শতাংশ। চীনের শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো–অপারেশন গ্রুপের মালিকানা ৩৪ শতাংশ। চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশনের শেয়ার ১৫ শতাংশ।
এর বাইরে উড়ালসড়কের জন্য জমি দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন, বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইন সরানো ও পরামর্শকদের ব্যয় মেটানোর দায়িত্বও বাংলাদেশ সরকারের। এ জন্য সাপোর্ট টু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নামে আরেকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে সেতু বিভাগের। শুরুতে ২০১১ সালে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা।