আগামী রোববার অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যেতে ভোটারদের ওপর সরকার বা নির্বাচন কমিশন চাপ দিচ্ছে কি না, তা জানতে চেয়েছেন ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকেরা। বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছে, ভোটারদের চাপ দেওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে নির্বাচন আয়োজনের অংশ হিসেবে ইসি সাধারণত ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের সচেতন করার কাজ করে থাকে।
বিকেলে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও মিশনপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের ভোটের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিং শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি জানান, বিদেশি কূটনীতিকেরা তাঁর কাছে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অভিযোগের সংখ্যা, ভোটের ফলাফল কবে প্রকাশ করা হবে এবং ভোটারদের চাপ দেওয়া হচ্ছে কি না, এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা জানতে চেয়েছেন, সরকার বা নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটারদের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না? যার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের ভোট দিতে যেতে হবে। তাঁদের বুঝিয়েছি, আমাদের দিক থেকে চাপ সৃষ্টির কোনো কারণ নেই। যখনই নির্বাচন করি আমরা ভোটার সাধারণের কাছে একটা আবেদন রাখি, যেটা আমাদের দায়িত্বের অংশ। আপনারা ভোটকেন্দ্রে এসে অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সেটা চাপ নয়, এটা হচ্ছে সচেতনতা।’
ভোটারদের চাপ দেওয়া প্রসঙ্গে বিরোধী দল বিএনপির ভোটে না আসার প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, ‘বরং চাপের কথা যদি আপনারা বলেন তাহলে আমাদের অন্য দিক থেকে হতে পারে। যেমন একটি বয়কটিং দল (বিএনপি) ভোট বর্জন করছেন এবং বর্জনটা যদি বর্জনই থাকে, সেখান থেকে ভোটারদের প্রতি আবেদন থাকতে পারে, আপনারা যাবেন (ভোটকেন্দ্র) না। তাহলে ভয়ে একটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটা আমরা তাদের ব্যাখ্যা করেছি।’
ব্রিফিং শেষে ভোটারদের ওপর চাপের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সাধারণভাবে তাঁরা প্রশ্ন করেছেন যে নির্বাচন কমিশনের এটা (ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে) কোনো অবস্থান আছে কি না। ভোট দিতে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো চাপ প্রয়োগ হচ্ছে কি না এবং তা যথাযথ কি না। সেই প্রশ্নের উত্তরে সিইসি সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন, এ রকম কোনো চাপ নির্বাচন কমিশন থেকে দেওয়া হচ্ছে না। আর ওনার জানামতে, এ রকম কেউ নেই যে ভোট দিতে চাপ দিচ্ছে। বরং উনি বললেন যে যারা মানুষকে ভয় ভীতি দেখাচ্ছে বা লিফলেট বিলি করছে, যেন ভোট দেওয়া না হয় বা ভোটদানে বিরত থাকে তাদের দিক থেকে চাপ আছে।
সিইসি জানান, নির্বাচন কমিশন কী সংখ্যক অনিয়মের অভিযোগ পাচ্ছে, সেটা জানতে চেয়েছেন কূটনীতিকেরা। তাঁরা উল্লেখযোগ্য অভিযোগ প্রায় ছয় শর মতো পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় চার শ অভিযোগের বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।
বিদেশি দূতেরা ভোটের ফলাফল কীভাবে প্রকাশ করা হবে, সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন উল্লেখ করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা তাদের জানিয়েছি, রেজাল্টের ব্যাপারে আমরা একটা অ্যাপ করেছি। স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ। আমরা তাদের অবহিত করেছি, প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং চলাকালে দুই ঘণ্টা পরপর যে তথ্য আমাদের প্রতিটি ইলেকশন সেন্টারে পাওয়া যাবে, তা সেখানে আপলোড করা হবে। তারপর যেকোনো নাগরিক পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে এক্সেস নিয়ে জানতে পারবে, ভোটের পরিমাণটা কীভাবে হচ্ছে।’
এই অ্যাপ চালুর উদ্দেশ্য তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘আমাদের সামগ্রিকভাবে যে স্বচ্ছতা আছে, সেটা আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করার জন্য। যেন তারা আশ্বস্ত হতে পারেন। অবিশ্বাস্য কোনো কিছু ঘটেছে কি না, সেটা যেন তাঁরা জানতে পারেন।’
ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা নিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, আট লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ভোট গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। তাঁরা ভোট গ্রহণ করবেন। আরও এক লাখ স্ট্যান্ডবাই থাকবেন। ৯ লাখ প্রস্তুত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর যে বাহিনীগুলো আছে—আনসার, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আর্মি, নেভি ও কোস্টগার্ড সব মিলিয়ে আরও আট লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে আছেন, ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। এটা বেশ বড় কর্মযজ্ঞ। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আরও তিন হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকও মাঠে রয়েছেন।
নির্বাচনে সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সহিংসতার ঘটনা আছে। তবে খুব কম।