কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে গণ–অভ্যুত্থানে সরকার পতন হয়েছে, তাতে ছাত্রীদের নেতৃস্থানীয়, সাহসী ও দৃঢ় ভূমিকা ছিল। বিজয় অর্জনের পরও ছাত্রীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, শহর পরিষ্কারসহ নানা কাজে অংশ নিচ্ছে। তবে বিজয়–পরবর্তী প্রতিনিধিত্বমূলক অনুষ্ঠান ও কর্মসূচিতে সম্মুখসারির সমন্বয়কদের মধ্যে সাহসী নারী মুখগুলো অনুপস্থিত বা কম। এ নিয়ে এখন থেকেই প্রশ্ন তুলতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে ক্ষুব্ধ নারী সমাজের ব্যানারে আয়োজিত ‘ঐক্যবদ্ধ থাকো সবে, নারীর প্রতি বৈষম্য রুখতে হবে’ শিরোনামে মানববন্ধনের লিখিত বক্তব্যে এ কথাগুলো বলা হয়। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নারী প্রতিনিধিরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনপ্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋতু সাত্তার। ক্ষুব্ধ নারীসমাজের পক্ষ থেকে আট দফা দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করা শেখ হাসিনার বিচারের ব্যবস্থা করা, দুর্নীতি বন্ধের পাশাপাশি পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা, মিথ্যা, হয়রানিমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা মামলা তুলে নেওয়া, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল, আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি স্বজন হারানোদের সহায়তা করা, সরকার পতন–পরবর্তী রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর জন্য অভিযোগ সেল গঠন করা এবং সংবিধান সংশোধন-সংস্কার অথবা নতুন সংবিধানের পদক্ষেপ নেওয়া হলে সেখানে নারী প্রতিনিধিত্ব ও ছাত্রীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
মানববন্ধনে বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণকারী নারীদের হাতে ছিল ‘নারী সমন্বয়কেরা কই’, ‘হামলা লুটপাট বন্ধ কর’, ‘রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি রক্ষা করুন’, ‘ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থাকে চিরতরে উচ্ছেদ’, ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ কর’সহ বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড।
মানববন্ধন শেষে নারীনেত্রী শিরিন হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলনে রাস্তায় নারীর উপস্থিতি থাকলেও এখন আর নারীর প্রতিনিধিত্ব দেখা যাচ্ছে না। তবে আমি সব সময় বুকে আশা বেঁধে রাখি। নারীরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’
দেশে স্বৈরাচার সরকারের পতন যেভাবে হলো, তা অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে উল্লেখ করে লেখক ও নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী দিনে নারীদের প্রতি বৈষম্য কোনোভাবেই যাতে শক্তিশালী না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’