জুলাই আন্দোলনের নারীরা কোথায় হারিয়ে গেলেন—এই প্রশ্ন উঠেছে ‘জুলাইয়ের নারীরা’ ব্যানারে আয়োজিত নারী সমাবেশ থেকে। রোববার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এই সমাবেশে বলা হয়, যেসব নারী আগে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, তাঁদের অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের এখন নানাভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে—এমন অভিযোগও করেছেন অনেকে।
‘গণহত্যাকারী হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে’ আয়োজিত এই নারী সমাবেশ হয় ‘জুলাইয়ের নারীরা’ ব্যানারে। যদিও সমাবেশের নেপথ্যে ছিল জাতীয় নাগরিক কমিটি।
জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য নুসরাত তাবাসসুম। সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পর সার্বিকভাবে নারীদের অংশগ্রহণ কমে গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জুলাই আন্দোলনের নারীরা কোথায় হারিয়ে গেলেন?
নুসরাত বলেন, নারীদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হলে সবার আগে শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সত্যিকার অর্থে সামনে নিয়ে আসতে হলে নারীদের অংশগ্রহণের পাশাপাশি নীতিনির্ধারণে নারীদের অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানোর পাশাপাশি নুসরাত সমাবেশে আরও বলেন, আগে বিচার ও সংস্কার হতে হবে, তারপর নির্বাচন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য সিনথিয়া জাহিন আয়েশা সমাবেশে বলেন, গণহত্যাকারী ও তাদের দোসরদের বিচারকার্য নিয়ে গড়িমসি ও ঢিলেমি চলছে। গ্রেপ্তার হওয়া অপরাধীদের ছেড়ে দিতে গোষ্ঠী বা ব্যক্তিস্বার্থে বিভিন্ন মহল সুপারিশ করছে এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এটি ‘দেশদ্রোহিতা’।
গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে কটাক্ষ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রতিরোধের কথা সমাবেশে উল্লেখ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের ছয় মাস পরও শহীদ পরিবারগুলো ন্যায়বিচার পায়নি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনকে নারীরাই সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন শিক্ষার্থী মালিহা নামলা। গত জুলাই-আগস্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। মালিহা বলেন, খুনি ও হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা না গেলে এত রক্তক্ষরণ ও মৃত্যুর কোনো অর্থ থাকে না। হত্যাকারীদের বিচার হোক। এর পাশাপাশি আন্দোলনে নারীদের অবদান অনুযায়ী মূল্যায়নের কথা বলেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলা শাখার মুখপাত্র মালেকা খাতুন সারা অভিযোগ করেন, আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা নারীদের এখন সাইবার বুলিং করছে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ। তিনি জুলাই গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
জুলাই–আগস্টে কক্সবাজার জেলায় আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তরুণী জিনিয়া। তিনি বলেন, আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের এখন নানাভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে।
‘আন্দোলন সফল হওয়ার পেছনে নারীরা’
নারীদের স্বীকৃতি ও অধিকারের জায়গাগুলো এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে সমাবেশে উল্লেখ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, রাজনীতিতে শুধু অংশগ্রহণ নয়, নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় দেখতে চান তাঁরা।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলন সফল হওয়ার পেছনে নারীদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বলে উল্লেখ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
রাজনীতিতে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণকে বিভাজিত করার জন্য হীন চেষ্টা চলছে বলে সমাবেশে অভিযোগ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। তিনি বলেন, নতুন দলে নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় থাকবেন।
শেখ হাসিনার শেষের শুরুটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নারীরা ভুক্তভোগী ছিলেন। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রশ্নে সরকার বা প্রধান উপদেষ্টার কোনো নমনীয়তা দেখলে আমরা তাঁদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করতে বাধ্য হব।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ ইয়াকুবের মা রহিমা বেগম, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক নিজাম উদ্দিন, সহমুখপাত্র সালেহউদ্দিন সিফাত, সদস্য তাজনূভা জাবীন, মাহমুদা মিতু, এহতেশাম হক, হুমায়রা নূর প্রমুখ।
সমাপনী বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নারী সেলের সম্পাদক সাদিয়া ফারজানা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিচারের কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা ও তাঁর দোসরদের অপরাধ আন্তর্জাতিকভাবেও প্রমাণিত।