ডিসি-ইউএনওদের গাড়ি কেনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জাতীয় নির্বাচনের আগে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য ২৬১টি গাড়ি কেনা হচ্ছে না। নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে তিনটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সেসবের জবাব দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত ডলার-সংকটের কারণে নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যেসব পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তাতে নতুন গাড়ি কেনার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব মনে হয়নি। ফলে নির্বাচনের আগে ডিসি-ইউএনওদের জন্য নতুন গাড়ি কেনা আর সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারও ডিসি–ইউএনওদের জন্য নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাবটি স্থগিত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গতকাল সোমবার অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, ডিসি-ইউএনওদের জন্য ২৬১টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব স্থগিত হয়েছে।

গত ১১ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ডিসি-ইউএনওদের জন্য গাড়ি কেনার প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি দেওয়া হয়। ২৬১টি গাড়ির প্রতিটির দাম ধরা হয় ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সরকারের ব্যয় হওয়ার কথা ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

৫০ কোটি টাকার ওপরে হওয়ায় প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয়। একই সঙ্গে তিনটি বিষয়ে জানতে চেয়ে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। প্রথমত, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কেনা গাড়িগুলোর সবশেষ অবস্থা কী? দ্বিতীয়ত, ডিসি-ইউএনওদের জন্য প্রতিটি গাড়ির দাম ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে কোন মানদণ্ডে? তৃতীয়ত, মাঠ প্রশাসনে এখন কতটি গাড়ি আছে, সেগুলোর সবশেষ কী অবস্থা? এসব প্রশ্নের জবাব দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সাধারণত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কোনো প্রস্তাব নীতিগতভাবে পাস হওয়ার পর তা পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখান থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর তা ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে তোলা হয়। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটিতে ওঠার আগে গাড়ি কেনার প্রস্তাব ঝুলে গেল।

এ বিষয়ে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ডিসি-ইউএনওদের জন্য নতুন গাড়ি কেনা দরকার। তবে রাষ্ট্র যদি মনে করে এখন গাড়ি কেনার দরকার নেই, সেটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, নতুন গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সেগুলোর জবাব তৈরি করছেন।

আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য গাড়িগুলো কেনার দরকার বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগকে জানিয়েছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছিল, জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করা, ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ মাঠপর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনসেবা নিশ্চিতে নতুন গাড়িগুলো দরকার। বর্তমানে যেসব গাড়ির আয়ুষ্কাল ১৩ বছর বা তারও বেশি হয়েছে, সেগুলোর পরিবর্তেই নতুন গাড়ি দেওয়া হবে।

নির্বাচনের সময় সাধারণত ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সংশ্লিষ্ট আসনে নির্বাচনের সব দায়িত্ব ও ক্ষমতা মূলত তাঁদের হাতে থাকে। এই কর্মকর্তাদের জন্য স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল (এসইউভি) কেনার প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

নতুন গাড়ি কেনার জন্য গত মাসে রাষ্ট্রীয় সংস্থা প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কার্যালয়ে খোঁজখবর নিতে যান সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সেখানে গিয়ে জানা যায়, নির্বাচনের আগে ডিসি-ইউএনওদের জন্য গাড়ি দেওয়ার মতো অবস্থা তাদের নেই। সর্বোচ্চ ৬৪ জেলার জন্য ৬৪ গাড়ি দেওয়া সম্ভব হবে। কারণ, অনেক আগেই সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থার গাড়ি কেনার প্রস্তাব এসেছে। সেসব সংস্থাকে গাড়ি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ডলার-সংকটের পাশাপাশি প্রগতি এই মুহূর্তে গাড়ি দেওয়ার মতো অবস্থানে নেই। এ বিষয়ও সামনে আসে।

নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন না হওয়ায় বিদ্যমান গাড়ি দিয়ে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ডিসি-ইউএনওদের বলা হবে বলে জানিয়েছেন সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, যদি কোথাও গাড়ি মেরামতের প্রয়োজন হয়, সে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ডিসিরা নির্বাচনের সময় সরকারের অন্যান্য সংস্থা থেকে গাড়ি নিতে পারবেন। চাইলে বেসরকারি পর্যায় থেকেও গাড়ি নেওয়ার সুযোগ আছে। তাই আসছে নির্বাচনে সরকারের অন্য দপ্তর ও বেসরকারি পর্যায়ের গাড়ি ব্যবহার করা হতে পারে।