মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় টহল কমান্ডার মেজর আশরাফুল হক আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ তথ্য জানিয়েছে।
আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় (বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত দেড়টা) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি বহর টহল থেকে ফেরার সময় পথে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বহরের প্রথম গাড়িটি আক্রান্ত হয়, সেটি ছিটকে ১৫ ফুট দূরে গিয়ে পড়ে। এতে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং একজন আহত হন।
নিহত শান্তিরক্ষীরা হলেন সৈনিক জসিম উদ্দিন, সৈনিক জাহাংগীর আলম ও সৈনিক শরিফ হোসেন। তাঁদের মধ্যে জসিম উদ্দিনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানার কাটিঙ্গা গ্রামে। জাহাংগীর আলমের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার দক্ষিণ টিটপাড়া গ্রামে। আর শরিফ হোসেনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার বাড়াক রুয়া গ্রামে।
আইএসপিআর জানায়, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের পশ্চিম সেক্টরের বোয়ার এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন (ব্যানব্যাট-৮) ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর থেকে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত আছে। দুর্গম এলাকার অস্থায়ী ক্যাম্প কুই থেকে পরিচালিত যান্ত্রিক টহলের একটি দল মেজর আশরাফের নেতৃত্বে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কাইতা এলাকায় টহলে যায়। বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টার দিকে ফেরার পথে টহল কমান্ডার মেজর আশরাফকে বহনকারী প্রথম গাড়িটি মাটিতে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণের কবলে পড়ে। সৈনিক শরিফ, জাহাংগীর ও জসিম গুরুতর আহত হন।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ঘটনার পরপরই আহত শান্তিরক্ষীদের উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়। মিশন সদর, জাতিসংঘ সদর দপ্তর ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুততার সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের ১৪৪ কিলোমিটার দূরে বোয়ারে অবস্থিত মিনুসকা হাসপাতালে নেওয়া হয়। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে সৈনিক জসিম উদ্দিন, জাহাংগীর আলম ও শরিফ হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। অপর আহত শান্তিরক্ষী মেজর মো. আশরাফুল হক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বর্তমানে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।
এ ছাড়া মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে নিয়োজিত অন্য শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে আছেন জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিহত সেনাসদস্যদের মরদেহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে আনার কার্যক্রম চলছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা আফ্রিকার ৮টি দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব বজায় রেখে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে চলেছেন। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।