আফরিন–মাসুদ বৈঠক: সংলাপের সুপারিশকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। ঢাকা, ১৬ অক্টোবর
ছবি: মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন একটি প্রাক্‌-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল যেসব সুপারিশ করেছে, তা জোরালোভাবে সমর্থন করে দেশটির সরকারও।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে এসে গতকাল সোমবার দেশটির সরকারের এ অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। তিনি গতকাল সকালে ঢাকায় এসে দুপুরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

মার্কিন স্বাধীন প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলটি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপসহ পাঁচ দফা সুপারিশ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) সমন্বয়ে গঠিত এই দল ৮ থেকে ১২ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করে।

আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, ‘ওরা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে, এনডিআই ও আইআরআইয়ের যে পরামর্শগুলো, সেগুলোর সঙ্গে তাদের এনডোর্সমেন্ট (সমর্থন) এবং অ্যালাইনমেন্ট (একই অবস্থান) আছে।’

মাসুদ বিন মোমেন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বারবার বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলে আসছে। আর সরকারের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে।

মার্কিন স্বাধীন প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলটি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপসহ পাঁচ দফা সুপারিশ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) সমন্বয়ে গঠিত এই দল ৮ থেকে ১২ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করে।

দূতাবাসের ফেসবুক ‘পোস্ট’

পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর আফরিন আক্তার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। কিন্তু তিনি কথা বলেননি। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সরকারের অনুরোধের কারণেই আফরিন আক্তার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি।

অবশ্য বৈঠকের পর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে একটি বিবৃতি দেয়। সেখানে তারা বলেছে, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় দেশটি। সেই নির্বাচনে জনগণের ভোট প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রচেষ্টা নিয়ে ঢাকার সঙ্গে আলোচনা করেছে ওয়াশিংটন।

যুক্তরাষ্ট্র বারবার বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলে আসছে। আর সরকারের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে।
মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্রসচিব

মার্কিন দূতাবাস আরও উল্লেখ করেছে, পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতে আফরিন আক্তার দুই দেশের শক্তিশালী বহুমুখী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। মার্কিন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, দুই দেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন অংশীদারত্ব, মধ্যপ্রাচ্য, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সাম্প্রতিক সফর এবং রোহিঙ্গাদের বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।

‘আমরা বোঝাচ্ছি জনগণের অংশগ্রহণ’

পররাষ্ট্রসচিব সন্ধ্যায় তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, আফরিন আক্তারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, র‍্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের আহ্বানের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এটা তো নতুন কিছু না। এটা তারা বলেই যাচ্ছে। বারে বারেই বলছে। আমরা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে তাদের বারে বারে নিশ্চয়তা দিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক বলতে আমরা বোঝাচ্ছি জনগণের অংশগ্রহণ, এখানে জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে কি না। সুতরাং জনগণ যে রায় দেবে, সেটাই মেনে নেবে দেশবাসী।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সেটা তো নির্ভর করবে দলগুলোর ওপর। সেটা তো সরকারের পক্ষে নিশ্চিত করা দুরূহ।

আইআরআই ও এনডিআই বাংলাদেশে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চাইলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তুত আছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রসচিব।

নাগরিক সমাজের সঙ্গে চা–চক্র

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় আফরিন আক্তার বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক চা–চক্রে অংশ নেন। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায় এই চা–চক্র অনুষ্ঠিত হয়। এতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন, মানবাধিকার নেত্রী ও চাকমা সার্কেলের রানী য়েন য়েন।

সূত্র জানিয়েছে, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান পরিবেশ কতটা সহায়ক, তা জানতে চেয়েছেন আফরিন আক্তার।