ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় মহেশখালীর মাতারবাড়ী উপকূলে নির্মিতব্য দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের দেশি-বিদেশি ১০ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৩টি বহুতল আবাসিক ভবন। প্রয়োজনে ভবনগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, গত ১০০ বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথ্য সংগ্রহ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। স্বাভাবিক জোয়ারের পানির স্তর থেকে ৩৩ ফুট উঁচু জায়গার ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে এ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র।
প্রকল্পে কাজ করছেন ১৭টি দেশের ১ হাজার ১৫০ বিদেশি নাগরিক। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিডেট। এর নির্বাহী পরিচালক (প্রকল্প পরিচালক) আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের ভেতরে ১৩টি বহুতল ভবন রয়েছে। সেগুলো দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং নিয়ে প্রকল্পের কাউকে বাইরে সরানোর প্রয়োজনও নেই।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৬ নম্বর বিপৎসংকেতে আজ সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। চলছে হালকা বৃষ্টিপাত। এসব উপেক্ষা করে চলছে প্রকল্পের নির্মাণকাজ। বিকেল চারটার দিকে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। তখনো কাজ চলছিল। প্রকল্পের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে বঙ্গোপসাগর। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতায় প্রকল্প এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধে আঘাত হানছে। বাঁধের উচ্চতা বেশি হওয়ায় প্লাবনের ঝুঁকি নেই বলে জানালেন শ্রমিকেরা। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহৃত কয়েকটি ভেসেল ও বোট সাগর থেকে বন্দরের চ্যানেলের অভ্যন্তরে এনে নিরাপদ রাখা হয়েছে।
কোল পাওয়ারের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ১০০ বছরে এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে। সে সময় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২২ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। সব দিক বিবেচনায় সাগরে স্বাভাবিক জোয়ারের পানির স্তর থেকে ৩৩ মিটার উঁচু জায়গায় চলছে এ প্রকল্পের কাজ। এ কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি নেই।
কোল পাওয়ারের প্রকল্প কর্মকর্তা (সাইট ইনচার্জ) ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, মহাবিপৎসংকেত জারি করা হলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখে দেশি-বিদেশি লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে। আশ্রয়ের জন্য প্রকল্পের ভেতরে তৈরি ১০টি ৩ তলা, ১টি ৫ তলা ও ২টি ৪ তলা ভবন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, প্রকল্পের কোনো শ্রমিক বা দেশি-বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারও প্রকল্প এলাকার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। থাকা-খাওয়া-কাজ সবই প্রকল্প এলাকার ভেতরে।