বাংলাদেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। কিন্তু এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হচ্ছে না। ব্যবস্থাপনার অভাবে প্লাস্টিক পুড়িয়ে ফেলা হয় কিংবা আশপাশ ও নদী-নালায় ফেলা হয়। প্লাস্টিক পোড়ানোর কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, বাড়ছে বায়ুদূষণ।
‘প্লাস্টিক পোড়ানো থেকে বায়ুদূষণ: পরিবেশ ও আইনগত দিক’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আজ রোববার এ আলোচনা সভার আয়োজন করে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেরিক পলিউশন স্টাডিজ ও বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে প্লাস্টিক পোড়ানো থেকে বায়ুদূষণ: কারণ, প্রভাব ও সমাধান’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এস এম মনজুরুল হান্নান খান। প্রবন্ধে ২০১৯ সালের এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো হয়, যা ব্যাপকভাবে বায়ুদূষণ করছে। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, দেশে যে প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়, তার মাত্র ২ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত হয়। প্লাস্টিক পোড়ানোসহ নানাভাবে বায়ুদূষণের কারণে ২০১৯ সালে দেশে ১ লাখ ৪৬ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে বলে আরেক গবেষণায় উঠে এসেছে।
মনজুরুল হান্নান খান বলেন, দেশে প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। রাস্তাঘাটে, নদী-নালায় প্লাস্টিক পড়ে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর চেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার করলেও এভাবে পড়ে থাকে না।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, ‘ঢাকা মহানগরে প্রতিদিন ৬০০ মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক জমা হয়। এর সমাধান কি এতই সহজ? আপনারা মাঝেমধ্যেই বলেন, আমরা পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন কেন বন্ধ করি না। এক দিন অভিযান করে যে পরিমাণ পলিথিন জব্দ করি, তা গুদামে রাখার জায়গা থাকে না। আপনারাই বলছেন, সেটা পুড়িয়ে দেওয়া যাবে না। তাহলে দ্বিতীয় দিন অভিযানে গেলে সেগুলো রাখব কোথায়? আপনারা মুখে যা বলেন, তা বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন।’
সারা বিশ্বে প্রতিবছর ৪৫ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে—এ তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (রসায়ন বিভাগ) এম শফিউর রহমান বলেন, ‘এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের ১০ ভাগ পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ কারণে ২০১৯ সালে বায়ুমণ্ডলে ৮ দশমিক ৫ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড যুক্ত হয়েছে, যা আমাদের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ১১ শতাংশ দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।’
প্লাস্টিক নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সবকিছুর বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক হাজির হবে। আপনারা যা-ই বলুন না কেন, আমি বন্ধ করতে পারব না। আমি আজকে এখানে বলে গেলাম, আপনারা এটা বন্ধ করতে পারবেন না। আপনি এড়িয়ে চলতে পারবেন, এখানে বসে অনেক সমালোচনা করতে পারব। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা তা বন্ধ করতে পারব না। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে কীভাবে করা যায়, সবাইকে মিলে সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘একসময় বাজারে গিয়েছি বেতের ঝুড়ি নিয়ে। এখন বাজারে খালি হাতে গিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে চলে আসি। সুতরাং প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমাদের অভ্যাসও পরিবর্তন করতে হবে।’
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদারের সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য খোদেজা নাসরিন আখতার হোসেন, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মো. ইউনুস মিয়া, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল প্রমুখ।