একুশের প্রথম প্রহরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের কক্ষ দখল নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ

একুশের প্রথম প্রহরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের কক্ষ দখল নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়ান ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হলের কক্ষ দখল নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন আহত হন।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার পরপর এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর রাত দেড়টার দিকে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সংঘর্ষে জড়িত নেতা–কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ ‘বিজয়’-এর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং আরেকটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে নাছির অনুসারীদের ৯টি ও মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারীদের দুটি উপপক্ষ। ‘বিজয়’ উপপক্ষ মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত বছর ৩১ জুলাইয়ের কমিটিতে পদ পাওয়া নিয়ে বিজয় উপপক্ষটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে আলাওল ও এ এফ রহমান হলের নেতা–কর্মীরা মিলে একটি পক্ষ। আরেকটি পক্ষের নেতা–কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলে থাকেন। সোহরাওয়ার্দী হলে এই পক্ষের নেতৃত্ব রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম, পদবঞ্চিত দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন নেতা। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ।

হলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখনো এ এফ রহমান ও আলাওল হলের বেশ কয়েকটি কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নজরুল ইসলামের অনুসারীদের হাতে রয়েছে।

কয়েক দিন আগে আলাওল হলের ৪৪২ নম্বর কক্ষটি দখল নেন ইলিয়াছের অনুসারীরা। এ নিয়ে গতকাল রাত ১০টার দিকে ওই দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এর জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষের নেতা–কর্মীরা রামদা, লাঠিসোঁটা নিয়ে একে অপরের ওপর চড়াও হন। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে অন্তত ১২ জন আহত হন। আহত নেতা–কর্মীদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক শুভাশিস চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মারামারির ঘটনায় ১২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের শরীরে ইটপাটকেলের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। একজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

সোহরাওয়ার্দী হলের বিজয় উপপক্ষের নেতা ও সহসভাপতি নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আলাওল হলে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে ৫৭টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কক্ষের তালা ভেঙে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দখলে নিয়েছেন ইলিয়াছের অনুসারীরা। রাত ১০টার দিকে তাঁরা যখন কক্ষ ফেরত চাইতে ওই হলে গিয়েছিলেন, তখন উল্টো তাঁদের তিরস্কার করা হয়।

মধ্যরাতে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ালে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেয়

নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, রাত ১২টা ১ মিনিটে তাঁদের নেতা–কর্মীরা যখন শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন, তখন ইচ্ছাকৃতভাবে ইলিয়াছের অনুসারীরা তাঁদের ওপর হামলা করেন। এরপর তাঁরা প্রতিহত করেছেন।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিজয় উপপক্ষের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, এ ঘটনায় তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ বিষয়ে জানতে সংগঠনের আরেক নেতা মোহাম্মদ আল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

পরে আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ফুল দেওয়ার জন্য শহীদ মিনারে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ সোহরাওয়ার্দী হলের নেতা–কর্মীরা তাঁদের গতি রোধ করে হামলা করেন। গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক এস এম ফয়সাল ও অনিক দাস নামের আরেক নেতাকে কুপিয়ে জখম করে। ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করছে। তাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।