ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে জনতার ঢল। আজ বিকেল চারটায়
ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে জনতার ঢল। আজ বিকেল চারটায়

বিজয় উল্লাসের পাশাপাশি হামলা, ভাঙচুর

শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে আজ সোমবার দুপুরের পর থেকে ফেনী ও নোয়াখালীতে বিজয় মিছিল করেছেন ছাত্র-জনতা। এ সময় জাতীয় পতাকা হাতে লাখো মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। তবে বিজয় উল্লাসের পাশাপাশি একশ্রেণির লোকজন বিভিন্ন ভবন ও কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করেন।

ফেনীতে আজ দুপুরের পর থেকে শহরের বিভিন্ন পাড়া–মহল্লা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক ট্রাংক রোডে সমবেত হয়ে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন। হাজার হাজার ছাত্র–জনতা আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েন।

বিজয় মিছিলে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। বিকেলের দিকে ফেনীর কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার অফিস ও বাসায় হামলার খবর পাওয়া গেলেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নোয়াখালীতে লাখো জনতার ‘স্বাধীন, স্বাধীন’ স্লোগানে প্রকম্পিত শহরের রাজপথ। আজ বেলা দুইটা থেকে জেলা শহর মাইজদীর রাজপথে বিজয় উল্লাস শুরু করেন ছাত্র-জনতা। বিকেল পাঁচটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁদের বিজয় উল্লাস চলছিল। আনন্দ মিছিলে শামিল হন নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরেরাও। তাঁদের কেউ হাতে জাতীয় পতাকা, কেউ লাঠি হাতে বেরিয়েছিলেন।

আনন্দ উল্লাস চলাকালে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার একটি অংশ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে বিভিন্ন আসবাবপত্র সড়কে এনে আগুন ধরিয়ে দেন। একইভাবে তারা শহরের জজ আদালত সড়কে নোয়াখালী প্রেসক্লাবে দুই দফায় হামলা চালান। প্রথম দফায় হামলা চালিয়ে প্রেসক্লাব ভবনের নিচে স্থাপন করা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুর করেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হামলা চালিয়ে প্রেসক্লাব ভবনের নিচতলার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটির সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

স্বাধীন স্বাধীন স্লোগানে মুখরিত হয় নোয়াখালী জেলা শহরের রাজপথ। আজ বিকেল চারটায় জেলা শহর মাইজদীর টাউনহল মোড়

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সরকার ঘোষিত কারফিউ উপেক্ষা করে সকাল থেকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতা নোয়াখালী শহরের রাজপথে অবস্থান নিতে শুরু করেন। বেলা যত বাড়ে ছাত্র–জনতার স্রোতও তত বাড়ে। ছাত্র-জনতার এই স্রোতে শামিল হন নারীরাও। বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ শহরের মাইজদী গার্লস একাডেমিসংলগ্ন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শিহাব উদ্দিনের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান। তাঁরা এ সময় বাড়ির সামনে থাকা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেন।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা বারবার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে সবাইকে আনন্দ উল্লাস করার জন্য আহ্বান জানান। তাঁরা এ সময় আনন্দ উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানে কিংবা কারও বাড়িঘরে হামলা থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন।

জেলার কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা আড়াইটার দিকে ওই আগুন দেওয়া হয়। এর আগে বেলা দেড়টার দিকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা। বিকেলে তাঁর অবস্থান জানার জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ছাত্র-জনতার উল্লাস ও ভাঙচুর চলার সময় পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যকে টহলে দেখা যায়নি। সার্বিক পরিস্থিতিতে পুলিশের অবস্থান কী জানার জন্য জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।