তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম না বাড়ানোসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
আজ রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআইউ) মিলনায়তনে ‘লুণ্ঠন প্রতিরোধে জ্বালানি খাত সংস্কার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব এ দাবি জানায়। সংগঠনটি বলেছে, অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় রোধ করে ঘাটতি সমন্বয় ও পণ্য মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধে তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির (তেল, গ্যাস) মূল্য না বাড়ানোর ঘোষণা দিতে হবে সরকারকে।
ক্যাবের আইন উপদেষ্টা জ্যোতির্ময় বড়ুয়া লিখিত বক্তব্যে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বক্তব্য দেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শামসুল আলম বলেন, ‘গত সরকার জ্বালানি খাতে অলিগার্ক সৃষ্টি করে গেছে। তাদের যারা আড়াল করবে, তারাও অলিগার্কের সহায়তাকারী। জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, সরকার অলিগার্কদের হাতে জিম্মি। আগের ধারাবাহিকতায় দাম সমন্বয় হয়েছে। দাম নির্ধারণে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) আসতে হবে। গণশুনানির মাধ্যমে যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই করবেন ভোক্তারা।’
শামসুল আলম বলেন, ‘শুধু জ্বালানি নয়, সব খাতেই অলিগার্ক তৈরি হয়েছে। সব অলিগার্কদের ধ্বংস করতে হবে। জনস্বার্থের বিরুদ্ধে যে নীতি, সেটাও বেআইনি। এগুলো এখন বানের জলে ভেসে যাবে। সামিটের দুটি অবৈধ চুক্তি বাতিল করতে হবে, আদানির চুক্তি বাতিল করতে হবে। লুণ্ঠনের সুযোগ বন্ধ করতে হবে। তাহলে পরিবেশেরও ক্ষতি হবে না।’ ২০২২ সালে বিদ্যুৎ খাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ক্যাব জানায়, সরকারের কাছে প্রাথমিকভাবে তিনটি দাবি জানানো হয়েছিল। দাবিগুলো হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন বাতিল করা। বিইআরসি আইন সংশোধন করে সরকারের নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানোর ক্ষমতা বাতিল করা। এই দুই দাবি এরই মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। তৃতীয় দাবি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্থাগুলোর সংস্কার করা। এটি শুরু হয়েছে।
তিনটি দাবি মোটামুটি পূরণ হওয়ায় সরকারের কাছে ক্যাবের ইতিবাচক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তাই এখন পুরো খাত সংস্কারের দাবি জানিয়েছে ভোক্তার অধিকারবিষয়ক সংগঠনটি।
লিখিত বক্তব্যে ক্যাবের আইন উপদেষ্টা জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘন করে কোনো সরকারি কেনাকাটা করার সুযোগ নেই। গত সরকারের মেয়াদে এসব করা হয়েছে। এটা নিয়ে সব সময় আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। এ ছাড়া কিছু গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
ক্যাবের দাবির মধ্যে আরও আছে, বিইআরসির আওতায় ক্যাবের জ্বালানি রূপান্তর নীতির আলোকে একটি জ্বালানি খাত সংস্কার কমিশন গঠন; অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ, দক্ষ, সৎ পেশাজীবীদের নিয়োগ দিতে সার্চ কমিটি করে বিইআরসিতে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ; জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন পদে পদস্থ ক্যাডারদের অপসারণ; পেট্রোবাংলা, বিপিসি, পিডিবি, আরইবি, স্রেডাসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানির শীর্ষ পদে কর্মকর্তাদের পরিবর্তন; বিদ্যুৎ বিভাগ ও জ্বালানি বিভাগে একই রকম পরিবর্তন।
বিইআরসির মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে অংশীজনের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ চায় ক্যাব। সংগঠনটি বলছে, প্রতিযোগিতাবিহীন বিনিয়োগ ও ক্রয়-বিক্রয় আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করতে হবে। বিইআরসির প্রস্তাবিত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের (পেট্রল, অকটেন, ফার্নেস তেল, কেরোসিন, ডিজেল) মূল্যহার নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রবিধানমালা কার্যকর করতে হবে। মুনাফাবিহীন সরকারি জ্বালানি সেবা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি ও লুণ্ঠনে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ এবং ‘জ্বালানি অপরাধী’ হিসেবে তাঁদের বিচার দাবি করেছে ক্যাব।