চট্টগ্রামে সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সাইফুল ইসলাম (৩৫) নিহতের ঘটনায় নগরে বিক্ষোভ করেছেন আইনজীবী ও শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা, নোয়াখালী এবং ফেনীতেও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল থেকে এসব কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
এর আগে বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় সাইফুল ইসলাম নিহত হন। তিনি সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) ছিলেন। তাঁর বাড়ি লোহাগাড়ার চুনতি এলাকায়। তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।
এ ঘটনার পর থেকে চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন আইনজীবীরা। আইনজীবী ভবনের সামনে, সোনালী ব্যাংকের সামনে, লয়েল রোডের হকার্স মার্কেটের সামনে এবং আদালত সড়কের বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নেন আইনজীবীরা। এ সময় তাঁরা বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। একই সময় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন নিউমার্কেট চত্বরে। রাত আটটার দিকে তাঁরা সেখান থেকে সরে যান।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, নিউমার্কেট চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও জনতা। তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রিজাউর রহমান সেখানে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। হিন্দু ভাইদের অনুরোধ, আপনারা ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ব। আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর নিউমার্কেট চত্বরে সাইফুল ভাইয়ের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম নগরে ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিকেলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় রাত সাড়ে আটটার দিকে পৃথক দুটি বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা উপজেলা সদরের প্রধান সড়ক এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কেরানীহাট এলাকায় এ বিক্ষোভ মিছিল করেন। লোহাগাড়া উপজেলায়ও কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। রাত আটটার দিকে ‘লোহাগাড়ার সর্বস্তরের জনসাধারণ’-এর ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলটি লোহাগাড়া বটতলী জামে মসজিদ থেকে শুরু হয়ে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র আমিরাবাদ স্টেশন প্রদক্ষিণ করে। এ সময় স্টেশনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে।
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে রাত নয়টার দিকে মশাল হাতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে গণ অধিকার পরিষদ। মিছিলটি শহরের গণপূর্ত ভবনের সামনে থেকে মোহাম্মদীয় মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল সড়কের মাথায় ও সুধারামের সামনে হয়ে টাউন হল মোড় প্রদক্ষিণ করে জেলা জামে মসজিদ মোড়ে যায়। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় উচ্চতর পরিষদের সদস্য আব্দুজ জাহের, জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি ফরহাদুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ‘সরকারকে বলব, যারা চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করেছে, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
ফেনীতে রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্র-জনতা। শহরের জিরো পয়েন্ট ট্রাংক রোড থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে খেজুর চত্বরে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিম, মো. ওমর ফারুক, তারেকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, জাফর ইকবাল, ফোরকান প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিম বলেন, ‘ইসকন একটি জঙ্গি সংগঠন। ইসকনের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনজীবী হত্যাকারী ইসকনের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী; প্রতিনিধি, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া এবং সংবাদদাতা, ফেনী)