বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমানকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো। তাঁর পরিবর্তে ডিএসডব্লিউ হিসেবে পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ পদে তাঁকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
গতকাল সোমবার এ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. ফোরকান উদ্দিন। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে গত ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম দাবি ছিল ‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ’ ডিএসডব্লিউ মিজানুর রহমানের পদত্যাগ। ঈদ ও পয়লা বৈশাখের ছুটি শেষে আগামীকাল বুধবার বুয়েটে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে৷ এর এক দিন আগে মিজানুর রহমানকে সরিয়ে দেওয়া হলো।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান ২০১৯ সালের ৩০ জুন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বর্তমানে বুয়েট শিক্ষক সমিতিরও সভাপতি।
বুয়েটের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিককে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলো। তিনি অতিরিক্ত এ দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়মানুযায়ী ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে মিজানুর রহমানকে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএসডব্লিউ আল আমিন সিদ্দিককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত ২৭ মার্চ বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ২৯ মার্চ থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
৩ এপ্রিল পর্যন্ত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দেন। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেনকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, ডিএসডব্লিউর পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ মার্চ রাতে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেনের হলের আসন বাতিল করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। পরে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইমতিয়াজের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সেই ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র কার্যক্রম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। ফলে ক্যাম্পাসে আবার ছাত্ররাজনীতি চালুর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি চান না।
৩ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, দুই দিনব্যাপী জনমত নিরীক্ষণের জন্য তাঁরা নিজ নিজ প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে অনলাইনে ভোট গ্রহণ করেন। ৫ হাজার ৮৩৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে স্বাক্ষর করেছেন ৫ হাজার ৬৮৩ জন। অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে।
ঈদ ও পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে ৪ এপ্রিল বুয়েটে ছুটি শুরু হয়। আজ মঙ্গলবার ছুটি শেষ হচ্ছে। আগামীকাল আবার একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তবে গতকাল থেকে বুয়েটের অফিস খোলা হয়েছে।