রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ রোববার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সদস্যরা
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ রোববার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সদস্যরা

শিল্পচর্চার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সরকার সমর্থন করে না

শিল্পচর্চার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সরকার সমর্থন করে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ রোববার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

প্রেস সচিব বলেছেন, বিক্ষুব্ধকারীদের নাটক বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাকে অর্থাৎ শিল্পচর্চার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সরকার সমর্থন করে না। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন বলে মনে করেন তিনি।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় দেশ নাটক প্রযোজিত নাটক ‘নিত্যপূরাণ’ মঞ্চায়নের সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে বিক্ষোভ করেন ২০ থেকে ২৫ জন ব্যক্তি। পরে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ নিজে মঞ্চে এসে নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

শিল্পকলায় নাটকের প্রদর্শনী বন্ধের বিষয়টি নিয়ে আজ নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকেরা। তখন তিনি সরকারের ওই অবস্থান জানান। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধ, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন শফিকুল আলম ও আজাদ মজুমদার।

গত শুক্রবার রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনাকে সরকার কীভাবে দেখে, সে প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, এ ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেখার বিষয়। সেদিন কী হয়েছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। পুলিশ কাজ করছে। এ বিষয়ে আজাদ মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক সহিংসতায় বিশ্বাস করে না। জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যা কিছুই হবে, রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে হবে।

বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য আদানি গ্রুপের চাপ দেওয়ার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আদানির বকেয়া টাকা সরকার শিগগিরই পরিশোধ করবে। তবে মনে রাখতে হবে, এ বকেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ের নয়। বিগত স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের সময়ের। আগের সরকার বিপুল টাকা বকেয়া রেখে গেছে।

শফিকুল আলম বলেন, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশের কাছে প্রায় ৭০ কোটি ডলার পাবে। গত মাসে সরকার প্রায় ১০ কোটি ডলারের মতো বকেয়া পরিশোধ করেছে, যা আগের মাসের দ্বিগুণ। তিনি বলেন, সরকার একক কোনো বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছে জিম্মি হবে না। তারা যতটা শক্তিশালীই হোক। আদানি যদি বকেয়া পরিশোধের কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়, সেটা সত্যি হতাশার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, রিজার্ভ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে। আদানির বকেয়া পরিশোধে সরকার চেষ্টা করছে। দ্রুত বকেয়া পরিশোধ করা হবে।

বিগত ১৫ বছরে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন। জাতিসংঘের সাধারণ সভায় যোগ দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভায় যোগ দিয়ে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কথা বলেছেন।

পাচারের টাকা ফেরত আনা কঠিন উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, তবে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ টাকা মানুষের। মানুষের কল্যাণে এ টাকা ব্যয় করা হবে।

৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসকে অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে দেখে? এ প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ৩ নভেম্বর বাংলাদেশের জন্য শোকাবহ দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। দেশের জন্য তাঁদের ভূমিকা অনেক। বর্তমান সরকার এ চারজনকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার শুধু একজনকেই সামনে নিয়ে আসত।

সংশোধনী: এই প্রতিবেদনে প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। সে আলোকে প্রতিবেদনের শিরোনামসহ সংশ্লিষ্ট জায়গায় সংশোধন করা হয়েছে।