বরাদ্দ পেয়েছিলেন একটি করে ফ্ল্যাট। সেখানে তাঁরা আরও একটি ফ্ল্যাট দখল করে নেন। আবার ভবনের খালি জায়গায় স্থাপনা বানিয়ে ভাড়া দিয়েছিলেন কেউ কেউ। সেখানে বেসরকারি হাসপাতাল–ক্লিনিক করে কার্যক্রম চলছিল। এই অবৈধ জবরদখল চলছিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১–এ। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত ভবনের এসব অবৈধ দখলদারদের সম্প্রতি উচ্ছেদ করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের উপসচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তরফদার আক্তার জামিলের নেতৃত্বে গত ২৬ অক্টোবর পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান (অতিরিক্ত সচিব) স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এসব তথ্য জানানো হয়।
চিঠির তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১ থেকে মোট ৩৭ জন অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন তাঁদের নামে একটি করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ থাকলেও দুটি ফ্ল্যাট দখল করে ছিলেন। অপর ৩১ জন ভবনের খালি জায়গা দখল করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছিলেন।
চিঠিতে বলা হয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে উদ্ধারের পর ফ্ল্যাটগুলো সিলগালা করে ও খালি জায়গা থেকে সব অবৈধ মালামাল অপসারণ করেছেন। পরে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার–১–এর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা খোরশেদ আলমের (উপমহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব) কাছে ফ্ল্যাটের চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
সাড়ে ৯ বছর এসব ফ্ল্যাট ও খালি জায়গা দখলে রেখেছিলেন তাঁরা। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তদন্তে এসব অনিয়ম উঠে আসার পর উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। উদ্ধার হওয়া ছয় ফ্ল্যাটের অবৈধ দখলদারেরা হচ্ছেন বাহার উদ্দিন রেজা, মো. সেলিম, জহুরা বেগম, মো. মান্নান আলী, রওশন আক্তার ও মাজেদা বেগম।
অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় খালি অংশ অবৈধভাবে দখল করে টিনের চাল, ইটের গাঁথুনি, কলাপসিবল দরজা ও থাই গ্লাস লাগিয়ে প্রাইম জেনারেল হাসপাতাল, রেমিডি কেয়ার হাসপাতাল ও রাজধানী ব্লাড ব্যাংকের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে ৩১ জন অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভবন নির্মাণের পরপরই মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের ৮৪টি ফ্ল্যাটের ৩৩টি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ৩৩টি ফ্ল্যাটের ২৪টি দখল করেন ১২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের অনেকেই জোর করে ফ্ল্যাটে ওঠেন। আবার কেউ কেউ মাঝের দেয়াল ভেঙে দুটি ফ্ল্যাট একটি বানিয়ে দখল করে নেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে খুব বেগ পেতে হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নন, এমন ব্যক্তি এখনো ওই ভবনে আছেন। তদন্ত করে যাঁরা অবৈধভাবে ফ্ল্যাট দখল করে ছিলেন, তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব ফ্ল্যাট জোর করে তাঁরা দখল করে নিয়েছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের ফ্ল্যাট ও দোকান শুধু যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারাই যাতে বরাদ্দ পান, সে জন্যই সরকারি উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১ নির্মাণ করা হয়েছিল।