বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুরা উদ্বিগ্ন: রানা দাশগুপ্ত

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত
ছবি: আশরাফুল আলম

বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিদারুণভাবে উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ঐক্য মোর্চার সমন্বয়ক হিসেবে রানা দাশগুপ্ত এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

রাজনৈতিক সহিংসতার সুযোগ নিয়ে দেশের পরিস্থিতিকে অধিকতর অস্থিতিশীল করতে যাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা না ঘটে, সে জন্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সব রাজনৈতিক দল ও সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে কোথাও ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা আক্রমণের শিকার হননি। তাহলে কেন এমন আশঙ্কা করছেন, এমন এক প্রশ্নের জবাবে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘এমন আশঙ্কা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে। পাকিস্তান আমলে ও স্বাধীন বাংলাদেশে বেশ কিছু ঘটনা লক্ষ করেছি, নির্বাচন পূর্বাপর সময়ে স্বার্থান্বেষী মহল সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তৈরি করে এবং সংখ্যালঘুরা যেন তাদের (স্বার্থান্বেষী মহল) বিপরীত ব্যক্তিকে ভোট দিতে না পারে, তার ব্যবস্থাও তৈরি করে।’

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ১ নভেম্বর

আক্রান্ত না হওয়ার পরও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় সংখ্যালঘুদের ঝুঁকি তৈরি হলো কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ ছিল এবং সরকার যথেষ্ট পরিমাণ আন্তরিক ছিল বলে এবারের দুর্গাপূজা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে প্রতিপালন করতে পেরেছি। এখন এটা হতে পারে। কিন্তু যদি সব রাজনৈতিক দল, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন থেকে সজাগ থাকে, তাহলে হতে পারবে না।’

১৭ নভেম্বর সমাবেশ

গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গত ২৩ সেপ্টেম্বর অনশন কর্মসূচি পালন করেছিল ঐক্য পরিষদ ও তার নেতৃত্বাধীন ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর ঐক্য মোর্চা। সেদিন সেখানে ক্ষমতাসীন দলের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ার উপস্থিত হয়েছিলেন। বর্তমান সরকারের এই মেয়াদে প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্তত সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙান তিনি। কিন্তু তারপর অক্টোবর মাস চলে গেলেও কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হওয়ায় হতাশ ঐক্য পরিষদ ও ঐক্য মোর্চার নেতারা।

এ বিষয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আশা করেছিলাম। সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের ঘোষণা এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি, যা ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের কাছে অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক।’ তিনি সংসদের শেষ অধিবেশনে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের বিল উত্থাপন ও পাস করার জন্য আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঐক্য পরিষদ ও ঐক্য মোর্চার ৪ নভেম্বরের সমাবেশ পিছিয়ে ১৭ নভেম্বর করা হয়েছে।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে এ সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জন কর্মকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক এম কে রায় প্রমুখ।