বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে বন্যাকবলিত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন অনেকে। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী প্যাকেট করা হচ্ছে। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শরীরচর্চা কেন্দ্র থেকে তোলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে বন্যাকবলিত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন অনেকে। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী প্যাকেট করা হচ্ছে। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শরীরচর্চা কেন্দ্র থেকে তোলা

ত্রাণ দিতে এসে নিজেরাও নেমে পড়ছেন প্যাকেট করার কাজে

বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে টানা পঞ্চম দিনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গণত্রাণ সংগ্রহ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। টিএসসিতে সংগ্রহ করা হচ্ছে নগদ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা কেন্দ্রের মাঠে নেওয়া হচ্ছে কাপড়, শুকনা খাবার, পানি ও ওষুধ। ত্রাণ নিয়ে আসছেন রাজধানীর মানুষ। এ ছাড়া ত্রাণ নিয়ে আসছেন ঢাকার বাইরে থেকেও কেউ কেউ।

আজ সোমবার দুপুরে টিএসসিতে দেখা যায়, ফটকের সামনে রসিদের মাধ্যমে নগদ সহায়তা গ্রহণ করছেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর অনেক সংগঠন যারা বন্যাদুর্গত এলাকায় যেতে পারছে না, তারাও এখানে নিজেদের সংগৃহীত অর্থ দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান স্বেচ্ছাসেবকেরা। ময়মনসিংহ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে দুই দল শিক্ষার্থী এসেছিল তাদের স্কুল থেকে সংগ্রহ করা ৫০ হাজার টাকা পৌঁছে দিতে।

গতকাল রোববার রাত পর্যন্ত টিএসসিতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা নগদ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী জিহাদ হাসান টিএসসিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন আজ সোমবার দুপুরে। তিনি বলেন, যেহেতু টাকার হিসাব লিখে রাখা হচ্ছে, তাই সহজে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। রোববার রাত পর্যন্ত এই (প্রায় পাঁচ কোটি) অর্থ সংগ্রহ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা কেন্দ্রে কাপড় প্যাকেট করার কাজ চলছে চার ভাগে। নারী, পুরুষ, শিশুদের পোশাক ও বিছানার চাদর বা তোয়ালে প্যাকেট করা হচ্ছে আলাদা করে। ক্যাফেটরিয়ার মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উঠেছে ত্রাণের পোশাকের প্যাকেট। স্বেচ্ছাসেবকেরা জানান, রোববার রাতভর প্যাকেজিংয়ের কাজ করা হয়েছে। এসব প্যাকেট প্রতিদিন রাতেই চলে যাচ্ছে বন্যাদুর্গত এলাকায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী অদিতি রহমান কাপড় প্যাকেজিং করতে করতে জানান, ২৪ ঘণ্টাই ত্রাণের জন্য কোনো না কোনো কাজ চলছে দুই জায়গায় (টিএসসি ও শরীরচার্চ কেন্দ্রে)। পালা করে দায়িত্ব পালন করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী অন্তু রহমান প্রথম যোগ দিয়েছে আজ সোমবার সকাল থেকে। বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থী রাবেয়া আক্তার জানান, তাঁরা খাবার ও পোশাকের জায়গা আলাদা করে প্যাকেজ করছেন, যাতে সহজে হিসাব রাখা ও ত্রাণ ট্রাকে তুলে দেওয়ার সময় সমানভাবে বণ্টন করা সম্ভব হয়।

আসছে শিশু–কিশোরেরাও

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক খুদে শিক্ষার্থী সোমবার এসেছে তাদের অভিভাবক নিয়ে। টিএসসিতে এমন দুজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ছুটির দিন বলে আবদার করায় তাঁরা সন্তানদের নিয়ে এসেছেন।

দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী তাঁর জমানো ৫০০ টাকা বন্যার্তদের জন্য দিয়েছে। সে উঁকি দিয়ে দেখছিল, খাতায় ওর নাম লেখা হয়েছে কি না। রাজধানীর ল্যাবরেটরি স্কুলের এক শিক্ষার্থী জানাল, বাবার কাছ থেকে এক হাজার টাকা চেয়ে এনেছে পানিতে ডুবে যাওয়া ছোট বাচ্চাদের জন্য খাবার কিনবে বলে। বলল, টেলিভিশনে বন্যার দৃশ্য দেখে খুব ভয় পেয়েছে সে।

টিএসসির প্রধান ফটকে বুথ স্থাপনের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার থেকে বন্যার্তদের জন্য গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগে শামিল হচ্ছেন। কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি, কেউ ভ্যানে করে, কেউবা ছোট ট্রাকে করে ত্রাণ নিয়ে আসছেন প্রতিদিন। বুথে থাকা শিক্ষার্থীরা দাতার নাম ও পণ্যের বিবরণ লিখে রাখেন খাতায়। অনুদানের অঙ্কও খাতায় লিখে রাখা হচ্ছে।

গাড়ি থেকে নামিয়ে ত্রাণের পণ্য টিএসসির অভ্যন্তরীণ ক্রীড়াকক্ষ ও ক্যাফেটেরিয়ায় জড়ো করেন শিক্ষার্থীরা। দিনভর এ কাজের পর রাতে ত্রাণসামগ্রী প্যাকেটের কাজ করতে হয়। স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, ত্রাণসামগ্রী দিতে এসে কেউ কেউ নিজেরাই প্যাকেট করার কাজে যুক্ত হয়ে যান।