ভারী বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে প্লাবিত উখিয়ার হলদিয়া গ্রাম। আজ দুপুরে
ভারী বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে প্লাবিত উখিয়ার হলদিয়া গ্রাম। আজ দুপুরে

উখিয়া-টেকনাফ

৩৪টি গ্রাম প্লাবিত, হাজারো মানুষ পানিবন্দী

টানা ছয় দিনের ভারী বর্ষণে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৮টি ইউনিয়নের অন্তত ৩৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৩ হাজার পরিবারের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, আজ বৃহস্পতিবার বৃষ্টি কম হওয়ায় টেকনাফের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বৃষ্টির পানি নেমে যাচ্ছে। তবে উখিয়ার কয়েকটি গ্রামের পানি কমতে শুরু করলেও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে খাল, বিল, নদীর পানি বাড়ছে।

পানিতে ডুবে থাকায় শত শত কাঁচা (মাটির) ঘরবাড়ি, গ্রামীণ সড়ক, কালভার্ট, পানের বরজ ভেঙে পড়ছে। কয়েকটি গ্রামে বাঁধ ভেঙে মৎস্য খামার বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া ভারী বর্ষণের ফলে উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পাহাড়ধসের ঘটনাও বাড়ছে।

গতকাল বুধবার রাতে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে পাহাড়ধসের ঘটনায় দুই রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ১৯ জুন রাতে একই আশ্রয়শিবিরে একাধিক পাহাড়ধসের ঘটনায় দুই বাংলাদেশি ও আটজন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে।

ভারী বর্ষণ আরও কয়েক দিন থাকার পূর্বাভাস আছে জানিয়ে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের উপসহকারী পরিচালক তোফায়েল আহমদ বলেন, গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আগের ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড হয়েছে ৭৪ মিলিমিটার।

তলিয়ে যাওয়া গ্রামগুলো হলো উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের নম্বরীপাড়া, ঘাটঘর পাড়া, পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া, ডেইলপাড়া, মনখালি, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ী, নলবুনিয়া, খেওয়াছড়ি, বৌবাজার, কুলালপাড়া, মনির মার্কেট, পাগলির বিল, রাজা পালং ইউনিয়নের কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া তুতুরবিল, হিজলিয়া, পিনজির কুল, রত্না পালং ইউনিয়নের সাদৃকাটা, পশ্চিম রত্না, বড়ুয়াপাড়া, খোন্দকার পাড়া, গয়াল মারা ও পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী তৈল খোলা, আঞ্জুমানপাড়া।

জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম সৈয়দ আলম বলেন, সেখানে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট চলছে। ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় নারী শিশুদের চরম দুর্ভোগ বেড়েছে। হলদিয়া পালং ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, বন্যার পানিতে বাঁধ ভেঙে বেশ কিছু মৎস্য খামার ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের উখিয়া উপজেলা শাখা সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, টানা পাঁচ দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মাটির রাস্তাগুলো লন্ডভন্ড এবং কালভার্ট বিধ্বস্ত হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতি যাচ্ছে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।

গতকাল প্লাবিত গ্রামাঞ্চল ঘুরে দেখেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হোসেন। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ও ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরির জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে সরে আসা লোকজনের জন্য একাধিক আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে।

এদিকে টেকনাফে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙিখালী, লামারপাড়া, আলী খালি, লেদা, চৌধুরীপাড়া, ওয়াব্রাং, কাঞ্জরপাড়ার বেশ কিছু গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় টেকনাফ সদর ও সাবরাং ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে জমে থাকা বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে। তবে মানুষের দুর্ভোগ যাচ্ছে না।

নাফ নদীর পাশে তৈরি বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্লুইসগেট না থাকায় ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নাফ নদীতে নেমে যেতে পারছে না জানিয়ে হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, বাঁধের পশ্চিম পাশের গ্রামগুলোয় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। শত শত ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে ডুবে আছে।