বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। ২ অক্টোবর রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানায় এ মামলা রেকর্ড হয়। এর বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে আরও দুটি হত্যা মামলা নেওয়ার আবেদন আদালতে জমা পড়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ আবেদন করেন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় ঢাকার আদালতে। এর পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ২২৭টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৯৫টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অধিকাংশ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তাঁর সরকারের সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনারসহ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও কয়েকজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।
গেন্ডারিয়ায় সাব্বির আহমেদ নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে গত ১৫ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়। ঢাকার সিএমএম আদালতে এ আবেদন করেন সাব্বিরের আত্মীয় মেহেদী হাসান।
সাব্বিরের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, সেই তথ্য জানানোর নির্দেশ দেন আদালত। পরে থানা থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত মামলার অভিযোগ এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। আদালতের ওই আদেশের পর ২ অক্টোবর মামলার অভিযোগ এজাহার হিসেবে গেন্ডারিয়া থানায় রেকর্ড করা হয়।
মামলার আরজিতে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই গেন্ডারিয়ায় সাব্বিরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও অন্যদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিনকে আসামি করা হয়।
মায়া ইসলাম (৫২) নামের এক নারীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন জমা পড়েছে। সোমবার ঢাকার সিএমএম আদালতে এ আবেদন করেন মায়া ইসলামের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। মায়া ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় রামপুরা থানায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, তা জানানোর জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার আরজির তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ জুলাই খিলগাঁওয়ের বনশ্রী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। তখন বনশ্রীর জি ব্লকে ৫ নম্বর সড়কের ৫৬ নম্বর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন মায়া ইসলাম।
ওই সময় রামপুরা থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার ফরাজীসহ ৮৭ জন ছাত্র-জনতার মিছিলের ওপর গুলি ছোড়ে। তখন মায়া ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মায়া ইসলাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে আসামি করা হয়েছে।
রাজধানীর মিরপুরে জুনায়েত নামের এক তরুণকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন জমা পড়েছে। সোমবার ঢাকার সিএমএম আদালতে এ আবেদন করেছেন জুনায়েতের বাবা শাহ আলম ফরাজী। জুনায়েতের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার আরজির তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি চালায়। এতে জুনায়েত গুলিবিদ্ধ হয়। প্রথমকে তাঁকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও অন্যদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করা হয়।