সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি রাজধানীর শাহবাগে
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি রাজধানীর শাহবাগে

কোটাবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সমর্থন

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে ‘যৌক্তিক ও ন্যায্য’ উল্লেখ করে সম্মান জানিয়ে কোটাব্যবস্থা বাতিলসহ অবিলম্বে সব দাবি পূরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

আজ শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সাদা দল এই দাবি জানায়। বিবৃতিতে সংগঠনের আহ্বায়ক মো. লুৎফর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও আবদুস সালাম স্বাক্ষর করেন।

সাদা দলের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা সরকারি পরিপত্রের অংশবিশেষ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি আমরা সমর্থন জানাচ্ছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনগ্রসর ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে সমাজে এগিয়ে আনার জন্য কোটাব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যখন সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা চালু হয়, তখন দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার, চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থী কোটাব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে সে আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপান্তরিত হলে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর কোটাপদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গত ৫ জুন সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আপাতত এ রায় বহাল রাখেন। ২০১৮ সালের পরিপত্রের অংশবিশেষ বাতিল করে দেওয়া রায়ের প্রতিবাদে পুনরায় চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছেন, আমরা মনে করি তা ন্যায্য ও যৌক্তিক। কারণ, কোটা কখনোই মেধার বিকল্প হতে পারে না।’

বিবৃতিতে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের “সন্ত্রাসীরা” নানাভাবে নির্যাতন ও হুমকি দিয়ে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও হুমকি দেওয়া সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবি করছি।’

প্রসঙ্গত, চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও কিছু দাবি জানাচ্ছেন। এগুলো হলো পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করার সুযোগ বন্ধ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।