জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য সেলিম রেজা বলেছেন, অভিবাসী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি এখনো অবহেলিত। তাঁদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এ দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। যেসব দেশে শ্রমিকেরা বেশি যাচ্ছেন, সেসব দেশের দূতাবাসে বাংলাদেশি চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সেলিম রেজা বলেন, ‘অভিবাসী শ্রমিকেরা ভালো নেই, অভিবাসনের খরচ বেশি...গত ২০ বছর ধরেই এমন আলোচনা শুনছি। আর কত দিন এ আলোচনা শুনতে হবে? এসব শোনার আর সময় নেই। এখন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে হবে।’
বর্তমান দায়িত্ব পালনের আগে সেলিম রেজা প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, সচিব, একই মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বিভিন্ন পদে প্রায় ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থাৎ তিনি সরাসরি অভিবাসী শ্রমিকদের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন।
আলোচনা সভায় সেলিম রেজা বলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের বিদেশে অকালমৃত্যুর বড় একটি কারণ অভিবাসনের উচ্চ খরচ। একেকজন শ্রমিক বিদেশ যাওয়ার আগে চড়া সুদে ঋণ করেন। সুদের এই টাকা পরিশোধ এবং পরিবারের খরচ সামলানোর বিষয়টি তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ফলে পরিশ্রম বেশি করেন শ্রমিকেরা।
দালালেরা শ্রমিকদের গ্রাম থেকে ধরে এনে বিদেশে চাকরির জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন উল্লেখ করে সেলিম রেজা বলেন, ‘নামমাত্র প্রশিক্ষণে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চোখ বুজে এ চিত্র আর কত দিন দেখতে থাকব? দক্ষ শ্রমিক না পাঠালে আরও ২০ বছর শ্রমিকেরা ভালো নেই, এমন নানান কথা শুনতে হবে।’
আলোচনা সভায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি নিয়ে ‘ভাইটাল ইয়েট ভালনারেবল লেবার মাইগ্রেন্টস অ্যাকসেস টু হেলথকেয়ার ইন দ্য গালফ স্টেটস’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রামরুর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সি আর আবরার। এতে বাংলাদেশ সরকার এবং গন্তব্য দেশের সরকারের করণীয়সহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।
এ সময় অভিবাসনবিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বিদেশে যাওয়ার আগে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে বা স্বল্প মূল্যে করার ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকেরা ফেরত আসার পর আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখতে হবে, শ্রমিকেরা কোন কোন রোগ নিয়ে ফেরত এলেন। শ্রমিকেরা যে কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তার সঙ্গে এসব রোগের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তখন তা স্পষ্ট হবে। এ ছাড়া অনিয়মিত শ্রমিকদেরও স্বাস্থ্য সেবা দিতে হবে।
আলোচনায় শ্রমিকদের ইনস্যুরেন্সের আওতায় আনা, স্বাস্থ্য কার্ড থাকা, বিদেশে মারা যাওয়া শ্রমিকদের লাশ দেশে আসার পর আবার ময়নাতদন্ত করা, মৃত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন আলোচকেরা।
সভায় সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহাইল; সাবেক সংসদ সদস্য মাহজাবীন খালেদ; অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কর্মরত ওয়্যারবির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক; প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব কাজী আবুল কালাম; এই মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সাবেক পরিচালক নুরুল ইসলাম প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।