প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ থেকে ১০ জুলাই চীন সফর করেন। তিন দিনের এ সফরের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি, কূটনীতিতে ভারত-চীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা, সম্পর্কের ভবিষ্যৎসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। তিনি বর্তমানে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সামছুর রহমান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর নিয়ে যে প্রত্যাশা ছিল, তার কতটা পূরণ হয়েছে?
এম হুমায়ুন কবির: উচ্চপর্যায়ের এ সফর নিয়ে অনেক কথা শুনেছি, অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তা পূরণ হয়েছে কম। নগদপ্রাপ্তি কম। অর্থনৈতিক সংকটে বাজেট–সহায়তা, চীনের মুদ্রায় আমদানি-রপ্তানি, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের বিনিয়োগ পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। সফর শেষে দেখছি, এই সফরে ভবিষ্যৎমুখী চিন্তা আছে, কিন্তু আর্থিক প্রতিশ্রুতি দেখছি না। বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত ) থেকে উত্তরণের পরও চীনের কাছ থেকে করযোগ্য পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে, এটি ইতিবাচক।
বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ইউয়ান আর্থিক সহায়তা দেবে চীন। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত–ঘাটতিসহ অর্থনৈতিক সংকট মেটাতে ৫০০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। এ সফরের অন্যতম অগ্রাধিকার ছিল এই ঋণসহায়তা। এটি চূড়ান্ত করা গেল না কেন?
এম হুমায়ুন কবির: এই সফর থেকে নগদ অর্থে প্রাপ্তি কম। ১ বিলিয়ন ইউয়ান পাওয়া গেছে। চীন সম্ভবত অপেক্ষা করবে, দেখবে। ভবিষ্যতে চীন বাংলাদেশকে স্বল্প সুদে, বিনা সুদে বাণিজ্যিক ঋণসহায়তা দিতে পারে।
চীন সফরের আগে আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেছেন। এই দুটি দেশের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশে ভারসাম্য রক্ষায় বাংলাদেশের কৌশল কী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
এম হুমায়ুন কবির: এই দুই সফরের মধ্য দিয়ে ভারত ও চীনের কৌশলগত বিষয়গুলো অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে। আমরা এত দিন যেভাবে কূটনীতি চালিয়েছি, তাতে নতুন নতুন উপাদান যুক্ত হচ্ছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা কোনো পক্ষেই যেতে আগ্রহী নই। দুই পক্ষই আমাদের কাছে টানতে চাইবে। কীভাবে আমরা এই ঝুঁকি থেকে বেঁচে থাকব, সে জন্য কুশলী কূটনীতির প্রয়োজন।
এই কুশলী কূটনীতির ক্ষেত্রে কী কী বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন?
এম হুমায়ুন কবির: অনেক ক্ষেত্রেই ভারত ও চীনের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা হয়। তারা তাদের স্বার্থ ও নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই কথা বলবে। আমাদের সচেতন থাকতে হবে, না হলে জটিলতার আশঙ্কা থাকবে। এত দিন এলডিসি কূটনীতি করেছি। এখন আর্থিকভাবে ভালো অবস্থানে যাচ্ছি। কূটনীতির পেশাগত পদ্ধতির বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বৃহৎ শক্তির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমাদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি করবে। জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংহতি জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশ-চীন উভয় পক্ষ একমত হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের উপায় দ্রুত প্রত্যাবাসন। চীনের এ অবস্থানকে কীভাবে দেখছেন?
এম হুমায়ুন কবির: দ্রুত প্রত্যাবাসন সমাধানের বিষয়টি স্বীকার করেছে, এটি ভালো। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন আমাদের ত্রিপক্ষীয় প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে দেবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন অগ্রণী ভূমিকা রাখবে, এটা প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই চীন সফরের সুদূরপ্রসারী সুফল পাওয়ার কেমন সম্ভাবনা রয়েছে বলে আপনি মনে করছেন?
এম হুমায়ুন কবির: যেকোনো উচ্চপর্যায়ের সফরের নানামুখী দিক থাকে। সেটা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীন সফর করুক অথবা চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে সফর করুক, সফরের পর কিছু কাজ হবেই। ইতিবাচক জায়গা তৈরি করবে। এই সফর আগামী দিনের বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কে নতুন উপাদান তৈরি করল। এ জায়গা ব্যবহারে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমাদের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে আমরা তাদের কাছ থেকে কতটা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা ও সম্মান আদায় করতে পারব।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
এম হুমায়ুন কবির: প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।