অপতথ্য সংখ্যায় কম হলেও তা লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে রাজনৈতিক অপতথ্য ছড়ানো। অপতথ্য ও ভুল তথ্য ছড়ানোর শিকার হয়েছেন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা, এমনকি কূটনীতিকেরাও।
ডিসমিসল্যাব নামের একটি প্রতিষ্ঠান সাতটি ফ্যাক্টচেকার (তথ্য যাচাইকারী) প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ের তুলনায় এপ্রিল-জুন সময়ে রাজনৈতিক ভুল তথ্য ছড়ানো বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রাজনৈতিক ভুল তথ্য ছড়ানো আগের তিন মাসের তুলনায় ৫৬ শতাংশ বেড়েছে।
ডিসমিসল্যাব তাদের নিউজলেটারে এই চিত্র তুলে ধরেছে। নিউজলেটারে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন ডিসমিসল্যাবের গবেষক তামারা ইয়াসমীন ও এনগেজমেন্ট এডিটর পার্থ প্রতীম দাস। তাঁরা রিউমরস্ক্যানার, বুমবিডি, নিউজচেকার, ফ্যাক্টক্রিসেন্ডো, ফ্যাক্টওয়াচ, এএফপি বাংলাদেশ এবং ডিসমিসল্যাবের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) তথ্য যাচাই প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেছেন। তার ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও অন্যান্য অপতথ্য ছড়ানোর চিত্র বের করা হয়েছে।
ডিসমিসল্যাব বিবেচনায় নিয়েছিল মোট ২ হাজার ৪৯টি প্রতিবেদন। তবে অনেক প্রতিবেদন ছিল একই বিষয়ে। আলাদা বিষয়ে (ইউনিক) প্রতিবেদন ছিল ১ হাজার ৩৯৫টি।
দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে রাজনৈতিক বিষয়ে অপ বা ভুল ছড়ানো হয়েছিল ৬৯টি। পরের তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) তা বেড়ে হয় ১২২টি। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রাজনৈতিক অপ বা ভুল তথ্য ছড়ানোর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৫টিতে।
সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও এসব অপ বা ভুল তথ্য লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের অধ্যাপক সুমন রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অপতথ্যের কারণে ও সঠিক তথ্যের অভাবে ভোটার প্রভাবিত হতে পারে। অপতথ্য সহিংসতা উসকে দিতে পারে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে অপতথ্য।
দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
ডিসমিসল্যাব বলছে, নির্বাচন ও রাজনীতিসংক্রান্ত ভুয়া বা অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, মার্কিন ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞা, নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদত্যাগ, নেতাদের মৃত্যু, সংঘর্ষ ইত্যাদি নিয়ে।
এপ্রিল-জুন সময়ে ভুয়া খবর বেশি ছড়িয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে অপতথ্যের নতুন ক্ষেত্র হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞা।
এই সাতটি ফ্যাক্টচেকার (তথ্য যাচাইকারী) প্রতিষ্ঠান যাদের নিয়ে বেশি ভুয়া খবর চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবর ছিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে। ডিসমিসল্যাব বলছে, তালিকায় আরও রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী প্রমুখ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়েও অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র গত ২২ সেপ্টেম্বর ভিসা নীতি প্রয়োগ শুরু করার ঘোষণা দেওয়ার পর দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নামে ভুয়া উক্তি ছড়ানো শুরু হয়। এক সপ্তাহ পর তাঁর নামে ছড়ানো ছয়টি ভুয়া তথ্য চিহ্নিত করা হয়।
রাজনীতির বাইরে ধর্ম, দুর্যোগ ও খেলাধুলা নিয়ে বেশি ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
ভিডিওর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মূলধারার গণমাধ্যমের ভুয়া ফটোকার্ড। জানুয়ারি-মার্চ সময়ের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ভুয়া তথ্য ছড়াতে ফটোকার্ডের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। বিশ্বস্ত গণমাধ্যমের সূত্র বিকৃত করে অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে রাজনৈতিক বিষয়ে।
ডিসমিসল্যাবের গবেষণাপ্রধান মিনহাজ আমান প্রথম আলোকে বলেন, কোনো মানুষ যখন একটি ভুয়া খবরের ভোক্তা হন, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর অ্যালগরিদম তাদের কাছে সে ধরনের খবর আরও পৌঁছে দেয়। তিনি বলেন, সঠিক তথ্য পেতে মূলধারার গণমাধ্যমের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজ অনুসরণ করা ভালো।