একই দিনে অসদাচরণের দুই ঘটনায় দুটি শাস্তি পেয়েছেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মশিয়ার রহমান। পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে আহত করা ও অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে দেওয়া হয়েছে ‘গুরুদণ্ড’। আর ১১ মাস ৮ দিন বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ‘পলায়ন’–এর জন্য তাঁকে দেওয়া হয়েছে ‘লঘুদণ্ড’। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ বৃহস্পতিবার এ–সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
গুরুদণ্ড হিসেবে এই পুলিশ কর্মকর্তাকে দুই বছরের জন্য ‘নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ’ করা হয়েছে। আর লঘুদণ্ড হিসেবে তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য ‘বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ’ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুলিশ কর্মকর্তা মশিয়ার রহমানের দুই অপরাধের শাস্তি একের পর এক কার্যকর হবে। অর্থাৎ সাত বছর তাঁর বেতন নিম্নতর ধাপে হবে। দুটি প্রজ্ঞাপনেই মশিয়ার রহমানের পরিচয় হিসেবে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনের তথ্য অনুযায়ী, মশিয়ার রহমান ২০১৮ সালের ৩ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের মিরসরাই সার্কেলের এএসপি থাকাকালে তাঁর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে সরকারি গাড়িযোগে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু টোল প্লাজায় যান। সেখানে কর্তব্যরত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মারধরসহ টোল প্লাজার বক্সের গ্লাস ভাঙচুর করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। টোল প্লাজার টোল ফি আদায় ছাড়া নিজেই সিগন্যাল দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেন। তাঁর এসব কর্মকাণ্ড টোল প্লাজায় সংযুক্ত সিসিটিভিতে রেকর্ড হয়, যা পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
মশিয়ার রহমান ওই দিনই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে অফিসার ইনচার্জ ও থানার অন্যান্য কর্মকর্তা এবং থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের সঙ্গে অভদ্র আচরণ করেন। এরপর ওই দিন বেলা তিনটায় তিনি চন্দনাইশ থানায় গিয়ে থানা ক্যাম্পাসে জব্দকৃত মামলার আলামত কনটেইনারের গ্লাস লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করতে শুরু করেন। বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে থামানোর চেষ্টা করলে তিনি তাঁর হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ওই পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে আহত করেন।
একজন সরকারি কর্মকর্তা ও সুশৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে এ ধরনের অপ্রীতিকর, অসৌজন্যমূলক, বেআইনি কার্যক্রম অনভিপ্রেত এবং সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলাপরিপন্থী বিধায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮–এর ৩(খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’–এর অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও ব্যক্তিগত শুনানিতে হাজির হবে কি না, সে সম্পর্কে অবহিত করতে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর তাঁর জবাব, তদন্ত প্রতিবেদন, অপরাধের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদিসহ সার্বিক বিবেচনায় তাঁর অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গুরুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মশিয়ার রহমানকে দুই বছরের জন্য নিম্নবেতন গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মশিয়ার রহমান সিলেটে রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকাকালে ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১১ মাস ৮ দিন বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। এতে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী ‘পলায়ন’–এর অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। ২০২২ সালের ৩১ মে অভিযোগ বিবরণী জারি করে তাঁকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয় এবং তিনি ব্যক্তিগত শুনানির ইচ্ছা করেন কি না, সেটাও জানাতে বলা হয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তা ওই বছরের ২৬ জুন কারণ দর্শানোর জবাব দেন। কিন্তু ব্যক্তিগত শুনানির ইচ্ছা পোষণ করেননি। অভিযুক্ত কর্মকর্তার কারণ দর্শানোর জবাব এবং প্রাসঙ্গিক সব তথ্য বিবেচনা করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে গুরুদণ্ড আরোপের সম্ভাবনা থাকায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, অনুসারে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিভাগীয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর প্রতিবেদনে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পলায়নের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে জানিয়ে মতামত দেন।
অভিযোগনামা, অভিযোগ বিবরণী, অভিযুক্তের জবাব ও তদন্ত কর্মকর্তার মতামত পর্যালোচনায় অভিযুক্তকে পাঁচ বছরের জন্য ‘বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ’ লঘুদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি ভবিষ্যতে ওই মেয়াদের কোনো বকেয়া প্রাপ্য হবেন না এবং এই মেয়াদ বেতন বাড়ানোর জন্য গণনা করা যাবে না।
পুলিশ কর্মকর্তা মশিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার থেকেই দুটি শাস্তি কার্যকর হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।