ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এসব সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবিও জানানো হয়েছে।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবিসহ মোট আট দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো জানানো হয় অন্তর্বর্তী সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কাছে।
দাবিগুলো তুলে ধরেন ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী পুষ্পিতা দে। তিনি বলেন, ‘আগামী তিন দিনের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ কার্যক্রম শুরু করতে হবে। যদি আমাদের দাবিগুলো না মেনে নেওয়া হয়, পরবর্তী সময়ে আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করব এবং রাজপথ ছাড়ব না।’
দাবি বাস্তবায়নে তিন দিন সময় দিলেও আগামীকাল রোববার বিকেল পাঁচটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্বালন কর্মসূচি রেখেছেন তাঁরা।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচারের দাবিতে আজ বেলা তিনটার দিকে শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও অংশ নেয়। এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসমাজের পক্ষ থেকে রোবায়েত ফেরদৌস, জোবাইদা নাসরীনসহ অনেকে বক্তব্য দেন। সমাবেশ চলার সময় শাহবাগ ও আশপাশের সড়কগুলোয় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আজকের বিক্ষোভ সমাবেশে কারও হাতে, কারও মাথায় জাতীয় পতাকা বাঁধা ছিল। সমাবেশে অনেকের হাতে বিভিন্ন দাবিসংবলিত পোস্টারও দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে ‘দেশটা আজও স্বাধীন নয়, আমার মন্দিরে হামলা হয়’, ‘হিন্দুদের নিরাপত্তা চাই’, ‘স্বাধীন দেশে সংখ্যালঘুরা স্বাধীন না কেন’, ‘মন্দিরে হামলা কেন? জবাব চাই, জবাব চাই’, ‘প্লিজ সেভ বাংলাদেশি হিন্দু’, ‘সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা চাই, আমরা কেন স্বাধীন নাই’ প্রভৃতি।
স্লোগান ও করতালিতেও সমাবেশস্থল উত্তাল ছিল। স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘আমার মাটি আমার মা, বাংলাদেশ ছাড়ব না’, ‘যারা বলে বাংলা ছাড়, দেশটা কি তার বাপ-দাদার’, ‘আমার দেশ তোমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘মন্দিরে হামলা কেন, জবাব চাই, জবাব চাই’, ‘জ্বালাও–পোড়াও বন্ধ করো, মানুষ হওয়ার চেষ্টা করো’, ‘তুমি কে, আমি কে, বাঙালি বাঙালি’ প্রভৃতি। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা শাহবাগ অবরোধ করে রাখেন। তারপর একটি মিছিল নিয়ে তাঁরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান। সেখানে কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন। গতকাল শুক্রবারও একই দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
আরও যেসব দাবি
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার দ্রুত বিচার, ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসনসহ আরও যেসব দাবি জানানো হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করা, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করা, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনাকক্ষ বরাদ্দ করা, সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন করা, শারদীয় দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি দেওয়া।