র‍্যাবের হাতে আটক আরসার সদস্যরা
র‍্যাবের হাতে আটক আরসার সদস্যরা

উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে র‌্যাবের অভিযান, আরসার শীর্ষ কমান্ডারসহ পাঁচ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৪) র‍্যাব অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (এএ) শীর্ষ কমান্ডার মৌলভি অলি আকিজসহ গোষ্ঠীর পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, একটি দেশে তৈরি এলজি, একটি ওয়ান শুটারগান, ১০ রাউন্ড কার্তুজ ও ২ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। গতকাল রোববার রাতে এ অভিযান চালানো হয়।

আজ সোমবার দুপুরে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অস্ত্রসহ আরসার পাঁচ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারের কথা তুলে ধরেন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।

গ্রেপ্তার আরসার পাঁচ সদস্য হলেন উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের ( ক্যাম্প-৫) সি-ব্লকের রোহিঙ্গা মো. শহিদুল ইসলাম প্রকাশ মৌলভি অলি আকিজ (৫০), ক্যাম্প-৬ আশ্রয়শিবিরের ডি-ব্লকের মৌলভি আনোয়ারের ছেলে মো. ফয়সাল প্রকাশ মাস্টার ফয়সেল (২৮), ক্যাম্প-২০ ( হাকিমপাড়া) আশ্রয়শিবিরের বি-৫ ব্লকের মৌলভি রহমত উল্লাহর ছেলে হাফেজ ফয়জুর রহমান (২৪), ক্যাম্প-৮ বালুখালী আশ্রয়শিবিরের বি-৪৪ ব্লকের করিম উল্লাহর ছেলে মো. সালাম প্রকাশ মাস্টার সালাম (২০) ও ক্যাম্প-২২ উনচিপ্রাং আশ্রয়শিবিরের আনু মিয়ার ছেলে মো. জুবায়ের (২৪)।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গতকাল রাতে হত্যা, অস্ত্রসহ ২১টি মামলার পলাতক আসামি ও আরসার শীর্ষ কমান্ডার মৌলভি আকিজের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জনের আরসার একটি দল মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের একটি পরিত্যক্ত ঘরে বসে গোপন বৈঠক করছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় র‌্যাব। কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও র‌্যাব আরসার শীর্ষ কমান্ডার মৌলভি আকিজসহ গোষ্ঠীর পাঁচজন সন্ত্রাসীকে অস্ত্র-গুলি-বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। মৌলভি আকিজের নেতৃত্বে আশ্রয়শিবিরের আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ও সেভেন রোহিঙ্গা মার্ডার হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছিল।

র‌্যাব অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আশ্রয়শিবিরের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৎপর রয়েছে। যারা অপহরণের পর মুক্তিপণ, গুম-হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত। আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার ও বিরোধের জেরে গোষ্ঠীগুলো একে অপরের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। র‌্যাব এ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী, সামরিক কমান্ডারসহ ১১২ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৫২ কেজি বিস্ফোরক, ৭০টি দেশি ও বিদেশি অস্ত্র। অস্ত্র, গোলাবারুদসহ আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের পর আশ্রয়শিবির কিছুদিন শান্ত ছিল। সম্প্রতি আরসার কয়েক নেতা তৎপর হয়ে ওঠেন। গোষ্ঠীর হামলা ও গুলিতে গত ৪০ দিনে আশ্রয়শিবিরের ৮ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। এর পর থেকে সন্ত্রাসীদের ধরতে মাঠে নামে র‌্যাব।

র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, আরসার গ্রেপ্তার পাঁচ সন্ত্রাসীকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করে মামলা হয়েছে।

র‌্যাব কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার মৌলভি অলি আকিজ ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে উখিয়ার কুতুপালং (ক্যাম্প-৫) আশ্রয়শিবিরে সপরিবারে বসবাস শুরু করেন। এরপর তিনি ক্যাম্প-৫ আশ্রয়শিবিরে আরসার হেড জিম্মাদারের দায়িত্ব নেন। তিনি নেটওয়ার্ক গ্রুপে কাজ করতেন এবং আশ্রয়শিবিরের গোপন তথ্য আরসার শীর্ষ কমান্ডারদের কাছে পৌঁছে দিতেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয় মৌলভি আকিজের নেতৃত্বে। তা ছাড়া মতাদর্শিক দ্বন্দ্বে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর সেভেন রোহিঙ্গা মার্ডার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও সরাসরি জড়িত এই মৌলভি আকিজ। ২০২২ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন। ওই হামলায় র‌্যাবের একজন সদস্যও গুরুতর আহত হন। ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত মৌলভি আকিজ।

আকিজের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় ১৩টি হত্যা, ১টি অস্ত্র, ২টি অপহরণ, ২টি অ্যাসল্ট, ১টি ডাকাতি এবং বিস্ফোরক আইনে ১টি মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে সর্বমোট ২১টি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার মাস্টার ফয়সালও ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে ক্যাম্প-২ আশ্রয়শিবিরে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তী সময় ক্যাম্প-৬ আশ্রয়শিবিরে চলে যান।

গ্রেপ্তার মাস্টার সালাম ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ( ক্যাম্প-৮) এসে বসবাস শুরু করেন। ২০২০ সালে তিনি আরসায় যোগ দিয়ে রোহিঙ্গা যুবকদের মিয়ানমারে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতেন। পাশাপাশি আরসার তহবিল (হিসাবরক্ষক) দেখাশোনা করতেন।

র‌্যাবের দেওয়া তথ্যমতে, আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার ও মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি ও মাদক চোরাচালানকে ঘিরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে হামলা, সংঘর্ষ, গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। চলতি ২০২৪ সালের ৯ জুন পর্যন্ত পাঁচ মাসে আশ্রয়শিবিরে ২০ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন। ২০২৩ সালে খুন হয়েছেন আরও ৬৪ জন রোহিঙ্গা।