সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি যতটা অবনতিশীল হয়ে উঠেছে, তা হুটহাট হয়েছে এমনটা ভাবার কারণ নেই। এমন পূর্বাভাস আগেই ছিল।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও মিয়ানমারের অনীহায় তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। মাঝে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্তু রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তুমুল লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আবার আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে রোহিঙ্গা সংকট। রাখাইনে দুই পক্ষের সংঘাতের জেরে বাংলাদেশ সীমান্তে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা বাড়ছে।
বিশেষ করে গত আগস্ট মাস থেকে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বান্দরবানে মিয়ানমারের ছোড়া কামানের গোলা, রোহিঙ্গাদের হতাহত এবং সে দেশের সেনাবাহিনীর আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে এনেছে ঢাকা। বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সীমান্তের পরিস্থিতি উন্নয়নের অনুরোধ জানালেও মিয়ানমার তাতে কান দেয়নি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনাতেও বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের তিন মাস আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে আরাকান আর্মির সঙ্গে এক অলিখিত অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেছিল তাতমাদো নামে পরিচিত দেশটির সেনাবাহিনী। গত ৩১ আগস্ট মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের চৌকিতে আরাকান আর্মির হামলার মধ্য দিয়ে ওই অলিখিত অস্ত্রবিরতি ভেঙে যায়। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডুর কাছে আরাকান আর্মির ওই হামলায় অন্তত ১৯ জন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী প্রাণ হারান। পরে রাখাইন ও দক্ষিণে চিন রাজ্যে আরাকান আর্মির হামলায় কয়েকজন সেনাসদস্য হতাহত হন। রাখাইনের পাশাপাশি দক্ষিণে শান এবং উত্তরে সাগায়েংয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে আরাকান আর্মিসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীর। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রান্তে এখন সেনাবাহিনীকে বিরোধী পক্ষের তুমুল প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গা সংকটের নতুন মাত্রা সামনে এনেছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। গতকাল শুক্রবার সিঙ্গাপুরের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আইএসইএএস-ইউসুফ ইসহাক ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘মিয়ানমারের সংকটে আন্তর্জাতিক সাড়া: এরপর কী?’ শীর্ষক ওয়েবিনারে সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ডেরেক মিচেল বলেছেন, মিয়ানমারের চলমান সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের একটি সুযোগ নতুন করে তৈরি হয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগানো উচিত।
মিয়ানমারে সাবেক রাষ্ট্রদূত ডেরেক মিচেলের মতে, মিয়ানমারের বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতি পুরো ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এমন এক পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের ওপর চীনের অব্যাহত প্রভাবটা উদ্বেগের। তবে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রান্তে সামরিক জান্তাবিরোধী পক্ষ, জনগণ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে দেশটির সেনাবাহিনীর অব্যাহতভাবে পর্যুদস্ত হওয়াটা ক্ষমতার ভারসাম্যে নতুন এক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক নানা পক্ষের জাতীয় ঐক্য সরকারসহ (এনইউজি) বিরোধী পক্ষের সঙ্গে এখন থেকেই নানা স্তরে যোগাযোগ স্থাপনটা জরুরি।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। ব্রাসেলসভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটি সেপ্টেম্বর মাসের সারা বিশ্বের সংঘাতের পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পর মিয়ানমারকে অবনতিশীল দেশের তালিকায় রেখেছে।
প্রসঙ্গত, সারা বিশ্বে সংঘাত প্রতিরোধ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির নীতি বিকাশের কাজে যুক্ত আইসিজি বলেছে, দুই বছর বিরতির পর রাখাইন রাজ্যে আবারও লড়াই শুরু হয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অন্যান্য অঞ্চলেও অব্যাহতভাবে সহিংস বিরোধিতার মুখে পড়ছে এবং শান্তিপূর্ণ ভিন্নমতাবলম্বীদেরও নিপীড়ন করছে।
মিয়ানমার নিয়ে গত বুধবার প্রকাশিত আইসিজির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সহিংস সংঘাত বেড়েছে। এতে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হামলার জেরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গুলি এসে পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। আগস্টের শেষের দিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় চিন রাজ্যে ১০ সেনাকে হত্যার দাবি করেছে আরাকান আর্মি। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর চিন রাজ্যের পালেতওয়ায় দুই পক্ষের সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, পালেতওয়া শহরের অবস্থান বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে।
মানবাধিকার, শান্তি, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় মিয়ানমারের জনগণকে সহযোগিতায় কাজ করছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের গ্রুপ স্পেশাল অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল ফর মিয়ানমার বা এসএসি–এম। গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এসএসি–এমের বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের ৩৩০টি টাউনশিপের (বাংলাদেশের উপজেলার সমকক্ষ) মাত্র ৭২টি এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ শতকরা হিসেবে সারা দেশের মাত্র ২২ শতাংশ এখন মিয়ানমার সেনাদের হাতে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি যতটা অবনতিশীল হয়ে উঠেছে, তা হুটহাট হয়েছে এমনটা ভাবার কারণ নেই। কারণ, জাতিসংঘ, আইসিজির আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই মিয়ানমারের পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে যাবে, সেই পূর্বাভাস দিয়েছিল। কিন্তু ’৬২ বা ’৮৮ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মতো মিয়ানমারের সামরিক সরকার এবার বিক্ষোভকারীদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। এবারের সামরিক শাসকবিরোধী বামার তরুণ–তরুণীদের জলপাই সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শহর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে এ আন্দোলনে যুক্ত হয়ে আঞ্চলিক স্বাধীনতাকামীরাও এগোচ্ছে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে। সামরিক শাসনবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) কর্মীদের নেতৃত্বে তাদের সহযোগী সংগঠন পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) নামে ছোট ছোট গেরিলা দল অনেকগুলো টাউনশিপে গড়ে উঠছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকারের নেতৃত্বাধীন পিডিএফের সঙ্গে মিলে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো তৎপরতা জোরদার করেছে। ফলে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এনইউজি, পিডিএফ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মিলিত তৎপরতা মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায় পরিলক্ষিত হচ্ছে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই সুযোগকে বাংলাদেশ কীভাবে কাজে লাগায়, সেটা এখন দেখার বিষয়। কারণ, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করলেও রাখাইনে কর্তৃত্ব ছিল আরাকান আর্মির। গত জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে যুদ্ধবিরতি থেকে সরে এসে আরাকান আর্মির সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এই মুহূর্তে রাখাইন রাজ্যে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে আরাকান আর্মি। ওই গোষ্ঠীর মূল রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) গত মাসে অনলাইনে এই সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছে, আরাকানের যেকোনো বিষয়ে বিশ্বের সবাইকে তাদের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসতে হবে।
ইউএলএ সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে ইউএলএ এবং আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দিতে হবে। তারপর আলোচনায় বসতে হবে। এটি ঘটলে ইউএলএ দুই পক্ষের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের একটা পথনকশা তৈরি করবে।
আরাকান আর্মি বা ইউএলএর এই ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে সুযোগ এবং ঝুঁকি দুটোই তৈরি করেছে। মিয়ানমারের অবনতিশীল পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করেছে। অন্যদিকে আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দেওয়াটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জের। কারণ, এ ধরনের সশস্ত্র গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেওয়া কিংবা তাদের সঙ্গে আলোচনা বাংলাদেশের জন্য একধরনের বড় বাধা। কারণ, মিয়ানমারের সামরিক সরকারকেই যেখানে স্বীকৃতি দেয়নি, সেখানে আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি ভাবা প্রায় অসম্ভব।
আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বা আলোচনার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মনে করেন, রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে তাদের অগ্রাহ্য করে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া কঠিন।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বে জ্বালানিসংকট, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক মনোযোগের পুরোটাই ছিল যুদ্ধ ঘিরে। সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট রোহিঙ্গা সমস্যা আড়ালে সরে যেতে থাকে। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতির কারণে আন্তর্জাতিক মনোযোগটা আবার এই অঞ্চলে ফিরে এসেছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের এই পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত ও বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে পুরো অঞ্চলে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আবার মিয়ানমারের ওপর চীনের ব্যাপক প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা আবার ফেরার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, নতুন প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারকে ঘিরে চীন–রাশিয়া জোটের সঙ্গে পশ্চিমাদের নতুন করে এক প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে।
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও দিল্লি ইউনিভার্সিটির বঙ্গবন্ধু চেয়ার মো. শহীদুল হক মনে করেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে সংঘাতময় পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতের পেছনে একদিকে পশ্চিমা বিশ্ব এবং অন্যদিকে চীন ও রাশিয়া। ফলে এটা নতুন এক আঙ্গিক নিয়েছে। দেশটির গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি নতুন এক মাত্রা যোগ হয়েছে। এতে করে রোহিঙ্গা সংকটটা আবার সামনে চলে এসেছে। শুধু গণতন্ত্র আনলেই তো হবে না। রোহিঙ্গা সংকটেরও যে সমাধান করাটা জরুরি, সেটা সামনে চলে এসেছে। সুতরাং বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন দেখার আছে বাংলাদেশ এই সুযোগকে কীভাবে কাজে লাগাবে।
মিয়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সামনে এনে সংকট উত্তরণে, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গতি আনতে জাতিসংঘের জোরালো ভূমিকা চাইছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতায় বাংলাদেশের এই অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে স্থায়ী এক সদস্যদেশ আলোচনায় তোলার বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সামনের দিনগুলোতে এ নিয়ে অগ্রগতি হতে পারে।
জাতিসংঘে বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় বাংলাদেশ জোরালোভাবে বলেছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের পক্ষ থেকে যেসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে, তা কাজে আসছে না। বিশেষ করে রাশিয়া ও চীনের মতো শক্তিশালী দেশ মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। রাশিয়া তো প্রকাশ্যে মিয়ানমারকে সমর্থন করে আসছে। এমন এক পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের রাশ টানতে হলে সুনির্দিষ্টভাবে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি।
আরাকান আর্মির মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে এনইউজি গত ফেব্রুয়ারি থেকে যোগাযোগ শুরু করেছে। তবে তাদের সেই যোগাযোগ বা সহযোগিতা সাম্প্রতিক মাসগুলোর আগে তেমন দানা বেঁধে ওঠেনি। যেহেতু রাখাইনে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মাঝে আরাকান আর্মির সমর্থন বাড়ছে, এটিকে পুঁজি করে এনইউজির পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এবং সরকারবিরোধী পিডিএফের সহযোগিতা সম্প্রতি বেড়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্য শক্তি রাখাইন থেকে চীনকে বের করে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। রাখাইনে চীনের বিপুল বিনিয়োগ আছে। সেখানে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লড়াই অব্যাহত থাকলে চীনের প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে বলে ধারণা করা হয়। পাশ্চাত্যের দেশগুলো যেকোনোভাবেই হোক বঙ্গোপসাগর এবং তার আশপাশে চীন যাতে নিজের প্রভাব বিস্তৃত না করতে পারে, সে জন্য এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারে রাখাইনের এখনকার পরিস্থিতিকে তারা বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে।